করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০০

This handout from the Royal Thai Navy taken and released on February 4, 2020 shows navy officials in protective suits standing beside a plane that brought Thai nationals back from Wuhan, the epicentre of the novel coronavirus outbreak, at U-Tapao Airport in Rayong. (Photo by Handout / various sources / AFP) / -----EDITORS NOTE --- RESTRICTED TO EDITORIAL USE - MANDATORY CREDIT "AFP PHOTO / ROYAL THAI NAVY " - NO MARKETING - NO ADVERTISING CAMPAIGNS - DISTRIBUTED AS A SERVICE TO CLIENTS

 

অনলাইন ডেস্ক:

চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যু সংখ্যা বুধবার প্রায় ৫০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এদিকে হংকংয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার পর অঞ্চলটিতে দুটি ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউএস এয়ারলাইনস।

জাপানের একটি ক্রুজ শিপেও কোয়ারেন্টাইনে ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।-খবর রয়টার্সের

চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলছে, মঙ্গলবার নতুন করে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯০ জনে পৌঁছেছে।

চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি এখনো বিশ্ব মহামারীতে রূপ নেয়নি বলেই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংন্থা (ডব্লিউএইচও)।

ডব্লিউএইচও এর মতে, একই সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন, তখনই তাকে বিশ্ব মহামারী বলা যায়। এর সাম্প্রতিক একটি উদাহারণ হচ্ছে ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই মহামারিতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে।

এদিকে এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা না করে যুক্তরাষ্ট্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। এ ভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

গত দুই সপ্তাহের মধ্যে যারা চীন সফর করেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। তার পরই চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করল। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের ফলে বরং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়ার পরিবর্তে বরং আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে প্রথম দেশ, যারা চীনাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল এবং চীন থেকে তাদের দূতাবাসের কিছু কর্মীকে সরিয়ে নিল।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ, যাদের কিনা মহামারী ঠেকানোর শক্তিশালী ব্যবস্থা আছে, তারাই কিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ না মেনে মাত্রাতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করল।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশও চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ডব্লিউএইচও হুশিয়ারি দিয়েছিল, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে ভাইরাসের সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়াবে।

কারণ তখন লোকজন অন্যপথে বিভিন্ন দেশে ঢোকার চেষ্টা করবে। ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আডহানম জেব্রেইয়েসাস বলেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ভালোর চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। কারণ এর ফলে তথ্য বিনিময় এবং চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ডব্লিউএইচও’র নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রথমেই সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে জরুরি কাজে নিয়োজিত ছাড়া অন্য সব মার্কিন নাগরিককে চলে যেতে বলে।

এর এক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার জরুরি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী ছাড়া আর সব সরকারি কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চীন ছাড়ার অনুমতি দেয়।

৩০ জানুয়ারি ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাসের ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ডব্লিউএইচও’র এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে তাদের সব সরকারি কর্মচারীর পরিবারের ২১ বছরের কম বয়সী সদস্যদের চলে আসতে নির্দেশ দেয়।

চীনের হুবেই প্রদেশে ছিলেন এমন মার্কিন নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর তাদের ১৪ দিন ‘কোয়ারেন্টাইনে’ বা সবার কাছ থেকে আলাদা অবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

চীনের মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৩৬১ জন মারা গেছেন। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে মারা গেছেন একজন। আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ১৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু চীনের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিকে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আটকে পড়া নিজ নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। ইতিমধ্যে একটি ফ্লাইট দেশে এসে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্মকর্তারা।

প্রাথমিকভাবে তাদেরকে সিডনি শহরের একটি হোটেলে প্রতিষ্ঠিত একটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে’ রাখা হয়েছে। সেখান থেকে এসব নাগরিককে দেশটির একটি নির্জন দ্বীপে পাঠানো হচ্ছে।

দেশটি পরিকল্পনা, চীন থেকে ফেরত আসা তাদের ৬০০ নাগরিককে মূল ভূখণ্ডে নেয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখা হবে। যা মূল ভূখণ্ড থেকে দুই হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বিবিসি জানিয়েছে, জাপান, চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

দেশটির কর্মকর্তারা সোমবার জানান, ইতিমধ্যে ৮৯ জন শিশুসহ ২৪৩ নাগরিককে নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি দেশে এসে পৌঁছেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ফ্লাইটটি এসে পৌঁছবে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন সোমবার রাজধানী ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আটকেপড়াদের দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে আমরা দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন নাগরকিদের প্রাধান্য দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, তার দেশের নাগরিকদের দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখা হবে।

এ ঘোষণার পর সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে, কারণ এই দ্বীপটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই শিবিরগুলোর বেহাল দশা এবং এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে সেখানে চার সদস্যের একটি শ্রীলংকান পরিবার রয়েছে। কিন্তু প্রায় এক হাজার মানুষকে ধারণ করার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের পাশাপাশি নিজেদের ৫৩ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে ক্যানবেরার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে নিউজিল্যান্ড।

করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কয়েকটি দেশ চীন থেকে আগতদের ঠেকাতে সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে যে সাম্প্রতিককালে চীনে সফরে গিয়েছেন, এমন বিদেশিদের তারা নিজ দেশে প্রবেশ করতে দেবে না।

গত ডিসেম্বরে চীনে এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এর আগে, রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান এবং ইতালিসহ কয়েকটি দেশ একই ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল।