জলবায়ু সংকটে বিপর্যস্ত জনজীবন,সিলেট যেন হিট আইল্যান্ড

আখতারুজ্জামান কে সাথে নিয়ে তৌসিফ আহমদের প্রতিবেদন:

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সিলেট অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা স্থানীয় জনজীবন ও অর্থনীতির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এক সময়ের পরিচিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্ষা জলবায়ু (কোপেন এএম) এখন তীব্রভাবে বদলে যাওয়ায় আকস্মিক বন্যা, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

ঐতিহাসিকভাবেই সিলেটে উচ্চ বৃষ্টিপাত হয়, বিশেষত জুন মাসে যেখানে গড় বৃষ্টিপাত প্রায় $16.9$ ইঞ্চি। তবে বর্তমানে এই স্বাভাবিক চক্রে এসেছে ভয়াবহ পরিবর্তন। স্বাভাবিক সময়ের বাইরে অনিয়মিত ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আকস্মিক বন্যার কারণ হচ্ছে, যা দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এই অস্বাভাবিকতা প্রমাণ করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলস্বরূপ স্থানীয় আবহাওয়ার মেজাজ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।

কেবল বৃষ্টিপাত নয়, দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তীব্র গরমের অনুভূতিও সিলেটবাসীর জন্য নতুন উদ্বেগ নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনের কারণে নগরে ‘হিট আইল্যান্ড’ প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে তীব্র গরমের অনুভূতি বাড়ছে এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাবগুলির একটি দেখা যাচ্ছে কৃষি খাতে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিকতার কারণে কৃষিজ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই অঞ্চলের ৫৬% কৃষক ফসলহানির শিকার হচ্ছেন। এটি কেবল কৃষকদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং সামগ্রিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিকেও ইঙ্গিত করছে।

এই সংকটের মূলে রয়েছে মূলত মানবসৃষ্ট কারণসমূহ। শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস (যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন) এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি। পাশাপাশি, বনভূমি ধ্বংস ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এর ফলে জীবমণ্ডলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং বনভূমি দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া দুর্বল হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন আজ বিশ্বজুড়ে একটি বড় হুমকি এবং সিলেট এর বিরূপ প্রভাবের একটি অন্যতম উদাহরণ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবসৃষ্ট কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করা আবশ্যক। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস, ব্যাপক বনায়ন এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতা মোকাবেলায় উন্নত অবকাঠামো নির্মাণে জোর দিতে হবে।