ব্রিটিশ রাজপরিবারে সংকট: রানির বৈঠক সোমবার

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান মার্কেল রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর ব্রিটিশ রাজপরিবার এক অভূতপূর্ব সংকটে পড়েছে।

যেরকম আচমকা এই ঘোষণা এসেছে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের কাছ থেকে তা রীতিমত হতবাক করে দিয়েছে সবাইকে। এ নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে এখন চলছে তীব্র শোরগোল।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই সংকট নিয়ে কথা বলার জন্য সোমবার তার সান্ড্রিংহ্যাম রাজপ্রাসাদে রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যদের ডেকেছেন।

প্রিন্স হ্যারির এই সিদ্ধান্তকে অনেকে তুলনা করছেন অষ্টম এডওয়ার্ডের রাজসিংহাসন ত্যাগের সঙ্গে।

ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের ক্রমতালিকায় অবশ্য প্রিন্স হ্যারির অবস্থান অনেক পেছনে, আট নম্বরে। রাজপরিবারের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, প্রিন্স হ্যারি, প্রিন্স উইলিয়াম এবং তাদের বাবা প্রিন্স চার্লস সোমবার রানি এলিজাবেথের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন। প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কেল ইতিমধ্যে কানাডায় চলে গেছেন। সেখান থেকে তিনিও টেলিফোনে এই আলোচনায় যোগ দিতে পারেন।

বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড জানান, সোমবারের এই বৈঠকেই যে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে তা নয়। তবে এই দম্পতির সঙ্গে রাজপরিবারের সম্পর্ক এখন কী দাঁড়াবে, সেটা নিয়েই মূলত কথা হবে এখানে। অনেক কঠিন কঠিন বিষয়ের সুরাহা করতে হবে এই বৈঠকে।

প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান দম্পতি কেন রাজপরিবার ছাড়তে চান

গত ৮ ডিসেম্বর হ্যারি এবং মেগান ঘোষণা করেন যে, তারা রাজপরিবারের সামনের কাতারের দায়িত্ব থেকে অবসর নিতে চান। একই সঙ্গে তারা যুক্তরাজ্য এবং উত্তর আমেরিকায় তাদের সময় ভাগাভাগি করে থাকতে চান। একই সঙ্গে তারা আর্থিকভাবেও স্বাধীন হতে চান, যাতে রাজকোষের অর্থের ওপর তাদের নির্ভর করতে না হয়।

তারা এই ঘোষণা দিয়েছিলেন রানি বা রাজপরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে আগাম আলোচনা ছাড়াই। এজন্যেই এ ঘটনা এত তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় বাকিংহ্যাম প্রাসাদের কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে যান। রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যরা নাকি এই ঘোষণায় একটা বড় ধাক্কা খেয়েছেন।

প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেল বিয়ের পর থেকেই সার্বক্ষণিকভাবে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে প্রেসের টার্গেটে পরিণত হন। এ নিয়ে তারা তাদের হতাশা এবং দুঃখের কথা জানিয়েছিলেন গত বছরের অক্টোবরে।

প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান বলেছিলেন, অনেক চিন্তাভাবনা করেই তারা রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাজপরিবারে ফাটল

প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের সঙ্গে যে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্ক খুব সুমধুর নয়, এরকম খবর নিয়মিতই প্রকাশ করা হচ্ছিল ব্রিটিশ গণমাধ্যমে।

বিশেষ করে বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার স্ত্রী কেটের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে খবর দিচ্ছিল ব্রিটিশ প্রেস। এর পাশাপাশি রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্য হিসেবে তাদের যেসব ভূমিকা পালন করার কথা, সেটাও তারা খুব বেশি উপভোগ করছিলেন না বলেই মনে হচ্ছিল।

বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা দুজনেই বেশ সহজভাবেই মিশতে পারেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ক্যামেরা প্রিন্স হ্যারি মোটেই পছন্দ করতেন না। এর পাশাপাশি রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিকতা তার কাছে খুব একঘেয়ে লাগত।

মেগানও চাননি রাজপরিবারের এরকম আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নিজের কণ্ঠস্বর হারাতে। অন্যদিকে যখন তিনি কোনো বিষয়ে তার মত সোজা প্রকাশ করেছেন, সেটার জন্য তাকে বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এসব কিছুই হয়তো তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

নতুন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

তবে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান রাজপরিবারের বাইরে নিজেদের জন্য যে নতুন জীবন গড়তে চাইছেন, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। তাদের নতুন ভূমিকা কী হবে? তারা কোথায় থাকবেন? কে এর খরচ বহন করবে?

প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান তাদের বিবৃতিতে বলেছিলেন, তারা আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে চান। কিন্তু কীভাবে সেটি সম্ভব? আর তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেই বা কী হবে? কে তাদের নিরাপত্তা দেবে? সেটির খরচ কে জোগাবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, সান্ড্রিংহাম রাজপ্রাসাদে সোমবারের বৈঠকে হয়তো এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হবে।