হবিগঞ্জে একমাসে বজ্রপাতে ২৫ জনের প্রাণহানি, কৃষকরা আতঙ্কিত

 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
চলতি বোরো মৌসুমে বজ্রপাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে গত এক মাসে ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ২২ জন কৃষি শ্রমিক, অপর একজন স্কুলছাত্রী, একজন নারী ও একজন শিশু রয়েছেন। জেলায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে বানিয়াচং উপজেলায়। শুধু এ উপজেলায়ই ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে বজ্রপাতের এমন ভয়াবহতায় কৃষক ও শ্রমিকদের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে হবিগঞ্জে। অনেক স্থানেই ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকদের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে নিহতরা হচ্ছেন বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া মহল্লার শামছুল হক (৩৮), মাটিকাটা গ্রামের রুবেল মিয়া (১৮), পৈলারকান্দি গ্রামের আমির আলী (৩৫), হিয়ালা গ্রামের মঈন উদ্দিন খাঁ (১১), দৌলতপুর গ্রামের অধীর বৈষ্ণব (২৭), বসু বৈষ্ণব (৩২), মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা জোবায়ের মিয়া (৩২), ভল্লবপুর গ্রামের শাহীন মিয়া (২৫), বাশিয়াপাড়া গ্রামের মো. আজিম উদ্দিন (৪০), মুরারআব্দা গ্রামের রনধীর চন্দ্র দাশ ( ৪৫), দাইপুর গ্রামের বসন্ত দাশের ছেলে স্বপন দাশ (৩৫), নূরপুর হাওরে মারা যান সিরাজগঞ্জ জেলার দত্তকান্দি এলাকার জয়নাল উদ্দিন (৬০), সুজাতপুর ইউনিয়নের সতমুখা গ্রামের জাহির মিয়ার মেয়ে স্থানীয় হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তানিয়া (১৫), দৌলতপুর গ্রামের শ্রমিক মিজানুর রহমান (৫২)।

লাখাই উপজেলার সুজন গ্রামের আপন মিয়া (৩০), রুহুল মিয়া (৬০), তেঘরিয়া গ্রামের সফি মিয়া (৫৫), বাহুবল উপজেলার সুয়াইয়া গ্রামের রাজু মিয়া (৩০), উত্তর ভবানীপুর গ্রামের মো. আবুল কালাম (৩৫), নবীগঞ্জ উপজেলার রোকনপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার (৫৫), বৈলাকীপুর গ্রামের নারায়ণ পাল (৪০) ও আমড়াখাই গ্রামের হাবিব উল্লাহর ছেলে আবু তালিব (২৫), মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রাম কুমার সরকারের ছেলে জোহর লাল সরকার (১৮), চুনারুঘাট উপজেলার দেওড়গাছ ইউনিয়নের জোয়ালভাঙ্গা গ্রামের সুজন মুডা (২৭), তাউসী গ্রামের গৃহবধূ হেনা বেগম নামে এক গৃহবধূ বজ্রপাতে মারা যান। হেনা বেগম ওই গ্রামের সোহেল মিয়ার স্ত্রী। ঘটনার সময় তিনি বাড়ির উঠানে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছিলেন। চা শ্রমিক সুজন মুডা নবীগঞ্জের হাওরে ধান কাটতে গিয়ে মঙ্গলবার বজ্রপাতে নিহত হন।

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানায়, গত ৪ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ২৫ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষি শ্রমিক। চলতি বোরো মৌসুমে হাওরে ধান কাটারত অবস্থায় এসব শ্রমিক মারা যান। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সরকারি আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে।

এদিকে বজ্রপাতে ঘন ঘন কৃষি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় হাওরে কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক শ্রমিক ঝড় বৃষ্টি দেখলে হাওরে ধান কাটতে যেতে চান না ফলে শ্রমিকের সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে বোরো ফসল কাটা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাতে বোরো ফসল গোলায় তোলা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।