এগারোতেই বুড়িয়ে যাচ্ছে শিশু

 

পাবেল খান চৌধুরী, হবিগঞ্জ

বয়স মাত্র এগারো বছর। স্থানীয় তাসনুভা-শামীম ফাউন্ডেশনের প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়াশুনা করছে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার নিতু আক্তার। পড়াশুনায়ও ভাল। যেমন লিখতে পারে, তেমনি ছবিও আঁকতে পারে মেয়েটি। অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধূলা করলেও কথা বলে খুবই কম। এ বয়সেই বুড়িয়ে যাচ্ছে সে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শিশুটি আক্রান্ত বিরল প্রজেরিয়া রোগে। এসব রোগে আক্রান্তদের গড় আয়ু মাত্র ১৩ বছর।

এদিকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতোমধ্যে নি:স্ব হয়েছে শিশুটির পরিবার। ডাক্তাররা জানিয়েছেন এ ধরণের রোগী চিকিৎসায় ভাল হয় না। তবু মেয়েকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার বাবা-মা। তাদের পাশে দাড়িয়েছেন স্থানীয়রাও। পাশে দাড়িয়েছেন হবিগঞ্জের নারী সমাজকর্মী চৌধুরী জান্নাত রাখি। মায়ের মত আগলে রাখছেন তিনি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর পেয়ে নিতুর বাসায় ছুটে যান হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ। এ সময় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে নিতুকে নগদ ১০ হাজার টাকা তার পরিবারের জন্য সরকারিভাবে একটি বসতঘর নির্মাণ করে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।

শিশুটির বাবা ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, নিতু আক্তারের জন্ম ২০০৭ সালে। জন্মের ৩ মাস পরই নিতু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে নিতুর হাত, পা, মুখ ও শরীরের চামড়া শুকিয়ে আস্তে আস্তে বৃদ্ধদের রূপ ধারণ করে। হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। পরে নিয়ে যান সিলেটে। সেখানে দুই বছর চিকিৎসা করালেও কোনো ফল পাননি। কয়েকদিন পর পর অসুস্থ হয়ে পড়ে নিতু। এক পর্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয় তাকে। সেখানে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিতুর চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, নিতু প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত। এ ধরণের রোগীরা অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকেন। চিকিৎসা করে এর কোন ফলাফল পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে ঢাকার চিকিৎসক হবিগঞ্জের ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন। গত বছর ৩ মাস পর্যন্ত প্রায় মৃত্যু শয্যায় ছিল নিতু। এ সময় নিতু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তরল খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এ সময় চিকিৎসকদের কাছে নিলে তাকে ৮টি ইনজেকশন দেন। কিন্তু নিতুর শরীর শুকিয়ে গিয়ে মাংস শক্ত হয়ে যাওয়ায় ইনজেকশন পুশ করতে গেলে সুই ভেঙে যায়। এমতাবস্থায় ৬ মাস অসুস্থ থাকে নিতু।

নিতু বয়সে ১১ বছরের হলেও চুলহীন মাথা আর ভাজপড়া চামড়া দেখে তার বয়স বোঝার উপায় নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের হিসাবে ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে এমন রোগাক্রান্ত লোকের সংখ্যা মাত্র একজন। এরই মধ্যে শারীরিক নানা জটিলতায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট এ শিশুটি। হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মুজিবুর রহমান পলাশ জানান, আমাদের বয়স হলে যেমন শরীরের কাঠামো তৈরি হয়, তার শরীরের সে ধরণের কাঠামো তৈরি হয়েছে। আমরা একজন বুড়ো মানুষকে যেভাবে যত্ন নেই। তাদেরকে সে ধরণের যত্ন নিতে হবে।

তিনি বলেন- এসব শিশুরা বেশিদিন বাঁচে না। তাদের গড় আয়ু ১৩ বছর। তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। এতে যতদিন তারা বেঁচে থাকবে জীবনটা ভাল কাটাতে পারবে। তবে এ রোগের কোন চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই বলে তিনি জানান।