স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত সিরীয় ফার্স্টলেডি আসমা আসাদ

অনলাইন ডেস্ক

ক্যান্সারে আক্রান্ত সিরিয়ার ‘ফার্স্টলেডি’ আসমা আল-আসাদ। বুধবার সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আসমা। ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় তার প্রাণহানীর আশঙ্কা কম। খবর বিবিসি’র।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে টুইটারে পোস্ট করা এক ছবিতে দেখা যায়, আসমা ও সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পাশাপাশি দু’টি চেয়ারে বসে আছেন। ছবিটির সঙ্গে পোস্টে লেখা হয়েছে, আসমা আল-আসাদকে বিষাক্ত স্তন টিউমরের জন্য চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি তার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রেসিডেন্ট ও তার দল আসমার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে।

আসমার জন্ম লন্ডনের অ্যাকটনে। বেড়েও ওঠেছেন সেখানেই। বিশ্বজুড়ে বেশ বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়ছেন তিনি। ২০১২ সালে বিরোধীদের বিক্ষোভে সরকারের হিংসার জন্য সিরিয়ার যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, আসমা তাদের মধ্যে একজন।

ব্রিটিশ-সিরীয় দ্বৈত নাগরিক আসমা। লন্ডনেই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন। পরবর্তীতে একজন বিনিয়োগকারী ব্যাংকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০০ সালে এক ছুটির দিনে তিনি এক নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বেড়াতে যান সিরিয়ায়। তখন সেখানেই পরিচয় হয় পারিবারিক বন্ধু বাশার আল-আসাদের সঙ্গে।

ওই বছরের জুনে আসাদের পিতা ও সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ মারা যান। ক্ষমতা চলে আসে বাশার আসাদের হাতে। পরবর্তীতে ওই বছর পুনরায় সিরিয়া ভ্রমণে গেলে ডিসেম্বরে আসাদের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন আসমা। লন্ডনে ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে দিয়ে রয়ে যান সিরিয়ায়। সেখানেই জন্ম হয় তার তিন সন্তানের।

প্রথম দিকে আসাদ দম্পতিকে সংস্কারবাদী হিসেবে দেখা হতো। আসাদের বাবার দমনমূলক শাসনের চেয়ে ভিন্নরূপ দেখা যায় সিরিয়ায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের পরিচিতি হয় অত্যাচারী শাসক হিসেবে। ২০১১ সালে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন তাকে- বিশ্বের সবচেয়ে নবীনতম ও আকর্ষণী ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্স্টলেডি হিসেবে বর্ণনা করে। তাকে আখ্যা দেওয়া হয়, ‘মরুর গোলাপ’। পরবর্তীতে অবশ্য ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইট থেকে বর্ণনাটি সরিয়ে নেওয়া হয়।

বিয়ের পর আসমা সিরিয়ার ১০০টি গ্রাম ঘোরেন। এই সময় তিনি সিরিয়ার মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তাদের দুর্ভোগের কথা শোনেন। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সৃষ্টি করেছিলেন। তাকে আখ্যায়িত করা হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আরব’ হিসেবে। আধুনিক ও অগ্রবর্তী সংস্কারমূলক কাজে সহায়তার জন্য সিরিয়াকে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার সহায়তা দেয় জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি।

তবে আরব বসন্ত শুরু হলে তিনি স্বামীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তুমুল সমালোচনার শিকার হন আসমা। ২০১২ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুকালীন সময়ে একেবারে নীরব ছিলেন ফার্স্টলেডি আসমা। আসাদকে সমর্থন দেওয়ায় ২০১৩ সালের ২৩শে মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আসমার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। তার ও তার স্বামী আসাদ, পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

২০১২ সালের জুলাই মাসে সিরিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালনা দপ্তরে বোমা হামলা হয়। এরপর নিয়মিতভাবে আসমাকে আর দেখা যায়নি জনসমক্ষে। এতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি রাজধানী ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু সেই সমালোচনার জবাবে তিনি কয়েকটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, আগামী দিনগুলোতে তিনি সিরিয়াতেই থাকবেন, স্বামীর সঙ্গে।