কালিঘাট, লালদিঘীরপাড়, ডাকবাংলো রোড ট্রাক পিকআপের দখলে, চরম দূর্ভোগ, সন্ত্রাসী হামলায় আহত ২

সিলেট :: সিলেট নগরীর সার্কিট হাউসের সামনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিকআপ, চালক, হেলপারদের সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর হয়েছেন মোটর সাইকেল আরোহী আপন দুইভাই। তারা হলেন, ৫২ সুগন্ধা ছড়ারপাড়ের আব্দুর রফিকের ছেলে মাহমুদুল হাসান ও তার ছোট ভাই আব্দুল মুমিন সৌরভ। ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহতদের সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাশ্ববর্তী কয়েক এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন মঙ্গলবার কালীঘাট লালদিঘীরপাড় এলাকায় পরিবহণ ধর্মঘট আহ্বান করেছিলো।
বৃহত্তর কালীঘাট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। তাছাড়া বৃহত্তর কালীঘাট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় পরিষদের আহ্বানে আজ সকাল ১১টায় একটি সমঝোতা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার দিন মোটর সাইকেল আরোহী দুইভাই মাহমুদুল হাসান ও আব্দুল মুমিন সৌরভ সার্কিট হাউস সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। পতিমধ্যে সামনে থাকা একটি পিকআপ থেকে তাদের উপর তেরপাল পড়ে যায়। তখন মোটর সাইকেল ব্রেক করে মাহমুদ হাসান তেরপাল গুছিয়ে না রাখার বিষয়টি চালকের কাছে যান চান। কিন্তু এতে উক্ত চালক কোন সদুত্তর না দিয়ে অশালীন আচরণ করেন। তখন ঘটনাটির প্রতিবাদ করলে পিকআপ চালক ও হেলপাররা দুইভাইয়ের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাদের হাতে থাকা চাবি দিয়ে মাহমুদ হাসানের চোখ ও মুখে একাধিক উপর্যপরি আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাম চোখে সজোরে আঘাত করলে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। শুধু তাই নয় পিকআপ চালক ও সন্ত্রাসীরা কাঠের রুল, লাঠিসোঠা দিয়ে দুইভাকে এলোপাথারি মারধর করে গুরুতর আহত করে।
আত্মরক্ষার জন্যে তাঁরা দুজন দৌড় দিলে, তাদেরকে চোর চোর বলে সম্বোধন করে এবং হাসানের সাথে থাকা একটি সাইড ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় মোটর শ্রমিক ও ড্রাইভাররা। ব্যাগের ভিতরে রক্ষিত ছিল ৭ লক্ষ টাকা, এই টাকাগুলো সুরমা মার্কেটের এবি ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন তারা। ওরা টাকার ব্যাগ নিতে গিয়েই স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে চোখের মধ্যে আঘাত করলে রক্তে মাহমুদ হাসানের পুরো শরীর লাল হয়ে যায়, আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসান বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। তারপর এলাকার স্থানীয় লোকজন এসে রাস্তার ওপরে অবৈধ পিকআপ স্ট্যান্ড থাকতে পারবে না বলে দাবি জানান। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সিলেটের ছড়ারপাড়, কালিঘাট, মাছিমপুর এলাকাবাসী।
এব্যাপারে ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম মুনিম জানান, শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত কালীঘাটের ব্যবসা বাণিজ্য। যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এখানে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, কামালগড়ের বাসিন্দারা নারী-পুরুষ শিশু নির্বিশেষে লালদিঘীরপাড়, কালীঘাট, ডাক বাংলো এলাকা রীতিমত রিকশা গাড়ি নিয়ে যুদ্ধ করে যেতে হয়। এলোপাতাড়িভাবে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অনভিজ্ঞ ট্রাফিক ব্যবস্থা রাস্তার অধিকাংশ স্থান জুড়ে মালামাল ফেলে রাখা প্রভৃতি কারনে অনেক দূর্ভোগ নিয়েই বাড়ি যেতে হয় এই এলাকাবাসীদের। তারউপরও ট্রাক ও পিকআপ চালকরা এপথে যাতায়াতকারী নারীদের সাথেও অনেক সময় অশালীন আচরণ করে থাকে, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরও তারা নির্ভিঘ্নে পথ চলতে দেয় না। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তারা তাদের রাজত্ব কায়েম করে থাকে।
২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ বলেন, কালীঘাট দিয়ে চলাচল করতে আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ট্রাক-পিকআপ চালকরা কোন শৃঙ্খলা মেনে চলাচল করেন না। কথায় কথায় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে। তাছাড়া আমাদের এলাকার বাসিন্দারা বিশেষ করে নারী সমাজ এই এলাকায় আসামাত্র অনেক বিরক্তি ও দূর্ভোগের মধ্যে পড়ে যান। এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ জরুরী। অন্যথায় যে কোন সময় অনাাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়। ট্রাক চালক ও পিকআপ চালকদের অত্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা থেকে এলাকাবাসী বাঁচতে চায়।
এদিকে সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ট্রাক শ্রমিক অনেক নেতাকর্মী। সিলেটের প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে কথায় কথায় ধর্মঘট আহ্বান নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এসব সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় আবু সরকার সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের জীবন জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে যাচ্ছেন।