কানাইঘাটে মহিলা মেম্বারকে যেভাবে ধর্ষণ করা হয়

 

কানাইঘাট প্রতিনিধি:

সিলেট জেলার কানাইঘাট সাতবাঁক ইউনিয়নের ৭নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্যা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রীর দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় লেখক আব্দুল কাহিরকে কানাইঘাট থানা পুলিশ গত বুধবার দিবাগত রাতে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

আব্দুল কাহিরকে ইউপি সদস্যার সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সাতবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। ইউপি সদস্যা ফাতিমা বেগমের মামলা নিয়ে বিপাকেও পড়েছে পুলিশ। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম ঐ ইউপি সদস্যা ফাতিমার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হয়রানী মূলক বলে জানিয়েছেন। সে মহিলা আওয়ামী লীগের দলীয় পদ ব্যবহার করে তার ব্যক্তিস্বার্থ সহ নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার উত্তর দলইমাটি গ্রামের বাবুল আহমদের সাথে মহিলা মেম্ববারের স্বামী সাতবাঁক ইউপির পশ্চিম জুলাই গ্রামের আলী আহমদের সাথে আর্থিক লেনদেন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।

বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সাতবাঁক ইউপির চাপনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের পুত্র বর্তমানে পৌরসভার ডালাইচর গ্রামে বসবাসরত কয়েকটি বইয়ের লেখক আব্দুল কাহিরসহ আরো অনেকে চেষ্টা করেন। এতে আলী আহমদ আব্দুল কাহিরের উপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। আলী আহমদের স্ত্রী ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন যে, গত ১৪ মার্চ শনিবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে রাত ৭টার দিকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে সাতবাঁক ইউনিয়নের বীরাখাই ব্রীজ সংলগ্ন পৌঁছিলে আব্দুল কাহির ও বাবুল আহমদ একটি সিএনজি গাড়ি নিয়ে তার পথরোধ করে। টানা হেছড়া করে একটি শীম ঝাড়ের পাশে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পালাক্রমে ধর্ষণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যায়।

এ ঘটনায় ইউপি মেম্বার গত ১৬ মার্চ মঙ্গলবার সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ওসিসি থেকে ধষর্ণের অভিযোগটি এফআইআর করার জন্য থানায় প্রেরণ করা হয়। পুলিশ অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করেন। আব্দুল কাহির ও বাবুল আহমদ কর্তৃক তাকে ধর্ষণের কোনো সঠিক আলামত না পাওয়ায় অভিযোগটি আরো অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ অবস্থায় মহিলা মেম্বার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণাপন্ন হয়। পুলিশ বুধবার গভীর রাতে আব্দুল কাহিরকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার ইউপি সদস্যার দায়েরকৃত অভিযোগ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ এর ৯(৩) ধারায় রেকর্ড করলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আব্দুল কাহিরকে গ্রেফতার করার পর এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকজন থানা এলাকায় ভীড় করেন।

তাৎক্ষণিক দুপুর ১২টায় সাতবাঁক ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মখদ্দুছ আলী, সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য আব্দুন নুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য রইছ উদ্দিন, ইউপি সদস্য শায়িকুল আলম, আ’লীগ নেতা ফারুক আহমদ, আব্দুল মুছব্বির, বিএনপি নেতা কুটি মিয়া, বিশিষ্ট মুরব্বী আলতাফ উদ্দিন, মঈন উদ্দিন, হাবিব আহমদ, তবারক আলী, নুর উদ্দিন এবং পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খাজা শামীম আহমদ সহ আরো অনেকে ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে ধর্ষণ মামলার নাটক ও আলামত সাজিয়ে সে আওয়ামী লীগ নেতা সমাজসেবী বিভিন্ন বইয়ের লেখক আব্দুল কাহির ও জাপা নেতা বাবুল আহমদের বিরুদ্ধে সাজানো ধর্ষণ মামলা দিয়েছে।

১৪ মার্চ বিরাখাই ব্রীজ ও আশপাশ এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে তারা জানান। এলাকার কেউই জানেন না। বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।

মামলার আসামি বাবুল আহমদের স্বজনরা জানিয়েছেন, ১৪ মার্চ অসুস্থ অবস্থায় সিলেট ল্যাব এইড ডায়গনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসায় ছিলেন রাত ১২টা পর্যন্ত। তিনি কিভাবে মহিলা মেম্বারকে ফাতিমাকে ধর্ষণ করলেন।

গ্রেফতারকৃত আব্দুল কাহিরের স্বজনরা জানিয়েছেন, ঐদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি কানাইঘাট বাজার ও বাসায় ছিলেন অনেকের সাথে। অথচ তিনি মহিলা মেম্বারকে গণধর্ষণ করেছেন বলে হাস্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, মহিলা মেম্বারের ধর্ষণের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত তদন্ত করে আসামি আব্দুল কাহির ও বাবুল আহমদের সম্পৃক্ততা না পেলে তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে এবং প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা হবে।