কানাইঘাট প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নানা অনিয়মের অভিযোগ

 

ডেস্ক রিপোর্ট:

সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওই উপজেলার প্রাইমারি শিক্ষকরা পদে পদে হয়রানীন শিকার হচ্ছেন।

প্রাথমিক শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, স্বপন কুমার দাসের স্বেচ্ছারিতার প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের নানা ধরণের হুমকী দেয়া হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ডালাইচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভা ছিল। সভার শুরুতে শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে নিজের তৈরি জাতীয় পতাকা প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ৩’শ টাকা মূল্যে বাধ্যতামূলক ক্রয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় শিক্ষকরা বলেন, প্রতিটি স্কুলে জাতীয় পতাকা রয়েছে, মুজিববর্ষ ও ২১ শে ফেব্রæয়ারি পালনের জন্য আমরা নতুন করে আরো ২টি পতাকা কিনব- এ কথা বলার সাথে সাথে শিক্ষকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস শিক্ষকদের প্রতি রুড় আচরণ করেন। বলেন আমার কথা কোনো শিক্ষক না শুনলে দেখিয়ে ছাড়ব। এ কথা বলার পর সমন্বয় সভায় উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এসময় স্বপন কুমার দাস টেলিফোনে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের কাছে নালিশ করেন। দুপুর ১২টার দিকে নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে একতরফা শিক্ষা কর্মকর্তার কথা শুনে শিক্ষকদের নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেন। এতে শিক্ষক সমাজ অপমানিত হয়েছেন বলে অনেক শিক্ষকরা জানিয়েছেন।

শিক্ষকরা জানান প্রায় ৯ মাস পূর্বে বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলা থেকে নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তি মূলক বদলি হিসাবে কানাইঘাটে যোগদান করেন স্বপন কুমার দাস। যোগদানের পর থেকে কিছু সুবিধা ভোগী শিক্ষকদের হাতে নিয়ে স্বপন কুমার দাস বিভিন্ন স্কুলের স্লিপ, ক্ষুদে মেরামত, বড় মেরামত, ওয়াশ ব্লক, শিক্ষকদের কনজুমার ঋণ, রুটিন মেরামতে কমিশন আদায়, শিক্ষক বদলীতে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ, নোট গাইড ও স্কুল পরিদর্শনের নামে অনৈতিক বানিজ্য, শিক্ষকদের অর্থনৈতিক হয়রানী সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পুরাতন বই নিলামের বাহিরে গোপনে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষকরা বলেছেন কানাইঘাটে এর আগে এ ধরনের কোন দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসারকে তারা কখন দেখেননি। টাকা ছাড়া শিক্ষকদের কোনো কাজ এই কর্মকর্তা করেন না।
নিজ চাউরা দক্ষিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন জানান এক শিক্ষককে বদলী করার জন্য ১৮ হাজার টাকা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস কয়েক মাস পূর্বে নেন। পরে ঐ শিক্ষককে বদলীর সুপারিশ না করায় ঘুষ বাণিজ্যের ১৮ হাজার টাকা কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করেন তিনি।

ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটিতে থাকাবস্থায় স্কুলে গিয়ে অনুপস্থিত দেখিয়ে অহেতুক তাকে হয়রানীর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে শিক্ষক কবির আহমদ জানিয়েছেন। শাহ ইব্রাহিম তশনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পরিদর্শন দেখিয়ে স্কুলের সকল শিক্ষককে অনুপস্থিত দেখিয়ে সাড়ে ১০টার সময় উল্লেখ করে শোকজ চিঠি প্রেরণ। পরে শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। বীরদল লক্ষীপুর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জুনেদ হাসান জীবান বলেছেন তার স্কুলে সরকারি বিনা মূল্যের বই দেয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন স্বপন কুমার দাস। টাকা না দেয়ায় তার স্কুলে বই দেননি তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার এসব অনিয়ম দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে বলে শিক্ষক সাদেক আহমদ, ফাতেমা বেগম, হেলাল আহমদ, নজরুল, নির্মল চন্দ্র রায়, বনশ্রী বিশ্বাস, মীর সুলতানা বেগম সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন।

শিক্ষা কর্মকর্তার এসব অনিয়ম দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন অনেক শিক্ষকরা সঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিত থাকেন না, এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শিক্ষকদের সমন্বয় সভায় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিলে সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান স্যার উপস্থিত হন। ১৭ মার্চ মুজিববর্ষ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের লক্ষ্যে তিনি নিজে জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে পরেন কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।