‘মোর লাগি দোয়া করিও’

 

এমএ রহিম, অতিথি লেখক:

গ্রামের রাস্তায় হেঁটে যাওয়া কৃষকের পাশে একটি প্রাভেট কার থেমে যায়। হতচকিত হয়ে কৃষক প্রাইভেট গাড়ির দিকে তাকান। সামনের আসন থেকে এক যুবতী (গৃহবধূ) ওই কৃষককে চাচা বলে ডাক দেন। কৃষকটির মুখে হাসি ফুটে উঠে। মা বলে জানতে চান কেমন আছেন ওই যুবতী। চোখে ছলছল পানি। এক মিনিটের মধ্যেই চাচা-ভাতিজির কথাবার্তা হয়। বিদায় বেলা ওই যুবতী তার চাচার কাছে ‘মোর লাগি দোয়া করিও‘ প্রার্থনা করেন।

১০ সেপ্টেম্বর একটি সামাজি সমস্যার সমাধানে গিয়ে হৃদয়কাড়া কয়েকটি দৃশ্য দেখতে হয়েছে।

সামাজিক সমস্যার সমাধান এগিয়ে চলেছে। তাই গ্রামের ছদ্মনাম দিলাম অচিনপুর। স্বামী-স্ত্রীর নাম দিলাম লাইলি-মজনু।

গৃহবধূ লাইলির অভিযোগ বিয়ের পর থেকে কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছেন না তার একমাত্র ভাই। এই সমস্যার সমাধানে লাইলি-মজনুর গ্রামে যাওয়া। প্রাইভেট গাড়িতে যাত্রী মাত্র চারজন। সামনের আসনে লাইলি আর চালকের আসনে মজনু। পেছনের আসনে আমি ও আরেকজন সাংবাদিক। গন্তব্য অচিনপুরে লাইলির বোনের বাড়িতে । শহর ছেড়ে গ্রামের পথ ধরে গাড়ি এগিয়ে চলেছে। যে বাড়িতে লাইলির শিশুকাল, শৈশব, কৈশর ও যৌবন কাল কেটেছে সেই বাড়ির সামনে যেতেই লাইলি তার স্বামীর হাত চেপে ধরেন। গাড়ি থামাতে বলেন। গাড়ি ব্রেক করে। হাত ইশারায় একটি শিশুকে কাছে ডাকে। কিন্তু শিশুটি উল্টোপথে ভোদৌঁড়। লাইলির দেহ ছিল বোরকায় মোড়ানো। এই অবস্থায় তাকে চেনার কোনো উপায় ছিল। হয়তো শিশুটি ওই অবস্থায় ফুফুকে চিনতে না পেরে দৌঁড়ে পালায়। কিন্তু তখন লাইলির গলার আওয়াজ অনেকটা কাপা কাপা মনে হচ্ছিল।

ঘন্টা দুই পর লাইলির বোনের বাড়ি থেকে আমরা রওয়ানা হলাম ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে। গাড়িটি লাইলির পৈত্রিক বাড়ির সামনে আসতেই আবার লাইলি তার স্বামীর হাত চেপে ধরে। গাড়ি থেমে যায়। কয়েকটি শিশুর মাঝখান থেকে একটি শিশুকে ডাক দেয়। লাইলির মুখে নেকাব ছিল না। শিশুটি ফুফু বলে কাছে ছুটে আসে। হাত মুঠ করে ১০-২০ টাকার কিছু নোট শিশুটির হাতে তুলে দেয়। টাকাগুলো নিয়ে দৌঁড়ে ছুটে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে। দেখেছি লাইলির ছলছলে চোখ। দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন বারবার। ছোট করে বলেছেন, ভাইকে ভাই বলতে পারছি না। অসুস্থ মায়ের পাশে যেতে পারছি না। কবে হবে এর অবসান।

কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ওই সামাজিক সমস্যার সমাধান অবশ্যই হবে। অপেক্ষায় আছি।