পল্লীবন্ধু এরশাদের কবিতাপ্রেম ও কাব্যচর্চা

 

অনলাইন ডেস্ক:

টানা ৯ বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর এই গুরুদায়িত্বের মধ্যেও অবসরে কাব্যচর্চা করে গেছেন তিনি। রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়াও পরেও এই অভ্যাস চালু রেখেছিলেন।

তার কবিতা ভাবনা ও কাব্য জীবনের প্রতি তীব্র আগ্রহ ও ভালোবাসার বিষয়টি বিবেচনা করলে অনেকের মনে হতে পারে রাজনীতিবীদ কিংবা সেনাপ্রধান নয়, তার একান্ত তীব্র ইচ্ছে ছিলো কবি হওয়ার।

আর সেই ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারেননি। আমৃত্যু কবিতাকে ভালবেসে গেছেন, লিখেছেন অনেক কবিতাও। তাই তো জীবনের শেষ পর্যন্ত সেসব কাব্য সাধনার জন্য হয়েছেন আলোচিত ও প্রশংসনীয়।

এরশাদের জীবনবৃত্তান্ত হতে জানা যায়, স্কুলে পড়ার সময়েই তাঁর প্রথম কবিতা রচনার প্রয়াস। বাংলাদেশের প্রকৃতি আর মানুষ কবির সকল মুগ্ধতার মধ্যে একটি একান্ত নিস্বর্গের মতো জন্ম নিয়েছিল সেই কৈশোর কালেই।

কবি এরশাদের কবিতায় দেশের রুপ, সৌন্দর্য ও প্রকৃতির পাশাপাশি প্রেমের তীব্র আহ্বান লক্ষণীয়। তার একটি জনপ্রিয় কবিতা ‘প্রেমগীতি’। যেখানে কবি এরশাদ লিখেছেন- ‘ক্লান্ত বিকেলে অবশ পায়ে/ ঘুরেছি যখন এই পথে। শান্ত নদীর নিরব কিনারে/ দেখা হয়েছিলো তোমার সাথে।’

কবিতাটিতে পল্লীবন্ধু প্রেমের তীব্র আহ্বানের কথা ব্যক্ত করেছেন এভাবে- ‘তোমার নয়নে নয়ন রাখিয়া/ বলেছিনু এসো প্রিয়া/ তাপিত হৃদয়ে ঝরনা ঝরাও/ প্রেমের অঞ্জলি দিয়া।’

এরকম বহু কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে কবি এরশাদের বাংলার রুপ, লাবণ্য, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেমের মতো বিষয়গুলো।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিখ্যাত সব কবির মতোই জীবনের সঙ্গে কবিতাকে মিশিয়েছেন, নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করেছেন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তার প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করেছেন কবিতার মাধ্যমে।

জাতীয় পার্টির এক সভা ছেড়ে চলে যেতে থাকা স্ত্রী রওশনের হাত ধরে থামিয়ে এরশাদ তাকে শুনিয়েছিলেন নিজেরই লেখা একটি কবিতার কয়েকটি লাইন- ‘নিঃসঙ্গ ধূসর বিশাল এক অন্ধকারে…. আমি জেগে আছি… কোথায় উষার জ্যোতি … কতদূর আলোর মৌমাছি?’

এর পর স্ত্রীকে বলেন, রওশন তুমি আমার আলোর মৌমাছি।

একজন কবিই পারেন স্ত্রীর কাছে অব্যক্ত অনুভূতি এভাবে শব্দের মায়াজালে ফুটিয়ে তুলতে।

কবিতার প্রতি এমন গভীর প্রেম বিষয়ে এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমি বাংলার ছাত্র ছিলাম। রবীন্দ্রনাথ পড়েছি, নজরুল পড়েছি, মাইকেল মধুসূদন, সুকান্ত পড়েছি। তাদের লেখায় প্রভাবিত হয়েছি। তবে আমি যা ভেবেছি তাই বইয়ে লিখেছি। ’

দেশ পরিচালনার পাশাপাশি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বেশ কিছু কবিতার বই উপহার দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের।

সেসব বইয়ে লেখা কবিতা বিভিন্ন বিষয় সাবলিল ভাষায় অলংকৃত হয়েছে। সেসব কবিতা পড়লে যে কেউ বুঝে নিবেন, সাহিত্যে কতটা অনুরাগী ছিলেন এই সাবেক রাষ্ট্রপতি।

বিশেষকরে তার লেখা ‘হে সুধীবৃন্দ’ কবিতাটি পাঠকের উদ্দেশ্যে না দেয়া হলে অপরাধই হয়ে যাবে-

সুধী, এমন সভায় প্রথম এলে/ আমার নিমন্ত্রণে;

হৃদয়টা তাই নাচলো সুখে/ এই মিলনের দিনে।

সবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো গহীন হৃদয় তলে,

উজার করি দিলাম আজি/ খুশীর অশ্র জলে।

কাব্য আমার আপন জগৎ/ মনের মহারানী,

তার লাগিয়া বেঁধেছিনু/ ছোট্ট গৃহখানি।

সেই গৃহেতে বসত করে/ আমার ভালোবাসা

প্রেয়সীকে চিনিয়ে দিতে/ এই সভাতে আসা।

প্রিয়া আমার এমন প্রিয়া/ থাকে সংগোপনে

আপন ইচ্ছায় উঁকি মারে/ মনের বাতায়নে।

সেখান থেকে হাত বাড়িয়ে/ আনি আপন ঘরে,

আলিঙ্গনে ধরা পড়ে/ আমার বাহুডোরে।

তারে নিয়েই জীবন আমার/ এই দেহের সে প্রাণ

সদাই যেনো গাইতে পারি/ জীবনের জয়গান।

প্রতিটি বইমেলায় ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পদচারণা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা -১৮ তেও নিজের লেখা নতুন চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন তিনি।

বইগুলো হল- হে আমার দেশ, ঈদের কবিতা, বৈশাখের কবিতা ও প্রেমের কবিতা।

এ চারটি বই ছাড়াও এখন অবধি আরও ২৩টি বেশি বই বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার। এর মধ্যে মাত্র ৪টি গদ্যগ্রন্থ বাকি সবই কবিতার বই।

এসব কবিতার বইয়ের মধ্যে রয়েছে – ‘একুশের কবিতা’, ‘যে কবিতা সুর পেল’, ‘জীবন যখন যেমন’ ও ‘এক আকাশে সাত তারা’ ইত্যাদি।