দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্তামণি

ডেস্ক রিপোর্ট :

দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে মুক্তামণিকে। বুধবার জোহরের নামাজের পর বেলা আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা জামে মসজিদের পার্শ্ববর্তী মাঠে জানাজার নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে দু’দফা মুক্তামণিকে গোসল করানো হয়। প্রথম দফায় গোসলের পর তার কাফনের কাপড় রক্তে ভিজে যায়। পরে আবারও তাকে গোসল করানো হয়। তার জানাজার নামাজে এলাকার শত শত মানুষ শরীক হন।

রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণি সবাইকে কাঁদিয়ে আজ সকালে না ফেরার দেশে চলে যান। বুধবার সকাল ৭টা ২৮ মিনিটে সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতেই মৃত্যু হয় ১২ বছর বয়সী মুক্তামণির।

মুক্তামনির যমজ বোন হিরামনি। বোনের মারা যাওয়া সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে যায়।

হিরামনি জানান, মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত মুক্তা তাদের সঙ্গে কষ্ট হলেও কথা বলেছে। খাবার পানি চেয়েছে। পানি খাওয়ার পর সেই যে ঘুমালো আর চোখ খুলেনি।

মুক্তামণি মারা যাওয়ার পর থেকে তার মা বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। মা, বোন ও স্বজনদের আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তার মৃত্যুর খবর জানার পর ওই এলাকায় শত শত নারী, পুরুষ তাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যান।

খবর পেয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু সেখানে যান। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরাও সেখানে ছুটে যান।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ জামিল বলেন, মঙ্গলবার রাতে মুক্তামণির বাড়িতে গিয়ে দেখি তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে কিছু ওষুধ দেই। আজ সকালেও তার গায়ে জ্বর ছিল।

সাতক্ষীরায় জন্মের দেড় বছর বয়স থেকে মুক্তামণির ডান হাতের সমস্যা শুরু হয়। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ৬ বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তার ডান হাত ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। সে বিছানাবন্দি হয়ে পড়ে। মুক্তামণির রোগ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। গত ১১ জুলাই মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। ১২ আগস্ট অপারেশন করে বড় একটি টিউমার অপসারণ করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে টানা ছয় মাস মুক্তামণির চিকিৎসা চলে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। টানা ছয় মাসের চিকিৎসায় খানিকটা উন্নতি হওয়ায় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মুক্তামণিকে এক মাসের ছুটিতে বাড়ি পাঠানো হয়। বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।