ভিটভূমি হারানোর শংকায় মনিন্দ্র পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নগরীর যতরপুরে নবপুস্প ১২/৩ আবাসিক এলাকার পৈতৃক ভিটায় জন্মলগ্ন থেকে বসবাস করে আসছেন মনিন্দ্র রঞ্জন দে। দীর্ঘদিন থেকে এলাকার চিহ্নিত একটি ভূমিখেকো চক্র যতরপুরে তার পৈতৃক (খরিদাসূত্রে) ১৭৮২ খতিয়ানের দাগ নং ১১১৪৯ ও ১১১৫০ এর (মোট ৪৭ শতক ভূমি) ভিটাবাড়ি দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে।

ভূমিখেকো চক্রটি বেশ কিছু দিন থেকে তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। আমাকে হুমকী এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। শনিবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন মনিন্দ্র রঞ্জন দে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৭৮২ খতিয়ানের ১১১৬১ নং দাগের লীজ বন্দোবস্থ মুলে বসবাসকারি একই মহল­ার মামুন উদ্দিন চৌধুরী আমাদের উপরোলি­খিত দাগের ভুমিকে সরকারি সম্পত্তি উলে­খ করে সুযোগ গ্রহণের ফন্দি আটঁতে থাকে। শুধু তাই নয়, মামুন চৌধুরী এই ভুমিটি আত্মসাত করণে নিজের পছন্দমতো কিছু লাঠিয়াল বাহিনী এবং প্রভাবশালী চক্র জড়িত করে আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করতে থাকে। এরই ধারবাহিকতায় আমার পৈতৃক সম্পত্তিটি সরকারি ভাবে শত্র“ সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করতেও এই চক্রটি সমর্থ হয়। পরবর্তীতে শক্র সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন ২০০১ ও অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি বিধিমালা আইন ২০১২ প্রণয়ণ করে গেজেট প্রকাশ করে এবং গেজেটের ১৮ নং ক্রমিকে আমার উপরোলি­খিত পৈতৃক সম্পত্তির দাগদ্বয় তালিকাভুক্ত হয়। এর ফলে আমি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন ট্র্যাইবুনালে মামলা নং ৩০৫/১২ দায়ের করি।

মামলা দায়ের পরবর্তী ওই ভুমিখেকো চক্র মৌলবাদি এবং হুজি নেতা আং মতিনকে দিয়ে আন-রেজির্স্টার্ড দুটি দলিল তৈরী করেন। ৯ এপ্রিল ১৯৬৩ ইং ও ১৫ ডিসেম্বর ১৯৬৩ ইং সালে আমার পৈতৃক ভুমির উপরে উক্ত জাল দলিল দিয়ে কুখ্যাত আং মতিনকে বাদি সাজিয়ে অর্পিত ট্র্যাইবুনালে ৩৯৩/১২ নং মামলা দায়ের করানো হয়।

এদিকে, একই মহল্লার কুখ্যাত জালিয়াত নারায়ণ পুরকায়স্থ ফনি,বিশে^শ^র জিউর দেবতার ১৭৮২ খতিয়ানের আমার পৈতৃক খরিদা ভূমির দুটো দাগ সহ মোট ১৩টি দাগের ভুমি নিয়ে কমিটি বানিয়ে অন্য এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করে। কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েলকে সভাপতি এবং মনোজ কপালি মিন্টুকে সম্পাদক মনোনীত করে বিশে^শ^র জিউর দেবতার সম্পত্তি অবমুক্তির জন্য অর্পিত ট্রাইবুনালে অত্যন্ত সুকৌশলে ভুমিখেকো নারায়ন পুরকায়স্থ ফণি ৩৩৮/১২ মামলা দায়ের করে। এর প্রেক্ষিতে আদালত উপরোলি­খিত অর্পিত মোকদ্দমা তিনটি একত্রে বিচারের জন্য নির্ধারণ করেন-তন্মধ্যে ভুমি মন্ত্রণালয় ২৩.০৩.২০১৬ প্রজ্ঞাপন জারি করেন যে, লিজ বন্দোবস্থ ধারীগণ নিজ অর্থে অর্পিত ট্রাইবুনাল মোকদ্দমায় পক্ষভুক্ত হয়ে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু অর্পিত আইনে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে যে, উত্তরাধিকারী বনাম রাষ্ট্র ব্যতীত তৃতীয় ব্যক্তি পক্ষভুক্ত হতে পারবেনা বা কোনও মামলাও দায়ের করতে পারবেনা। তদুপরি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক আইন পরিপন্থি একটি পরিপত্র জারি করে। উক্ত পরিপত্রের আলোকে বিজ্ঞ ট্র্যাইবুনাল আমার পৈতৃক ভুমির কথিত দাবিদার হেলাল আহমদ চৌধুরী গংকে আমার দায়েরকৃত ৩০৫/১২ অর্পিত মামলায় পক্ষভুক্ত করে। পক্ষভুক্ত এই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে মনিন্দ্র রঞ্জন দে ভুমি মন্ত্রনালয়ের পরিপত্রটি চ্যালেঞ্জ করে ৬৮/২০১৭ নং রিট দায়ের করলে হাইকোর্ট এই পরিপত্রটি অকার্যকর বলে ঘোষণা করে। ২০১৭ সালের ৬ জুন বিচারান্তে ১৭৮২ খতিয়ানের পৈতৃক দু’টি দাগের ভুমিসহ ১৩ টি দাগের আটআনা অংশ দেবতা বরাবরে এবং বাকী আটআনা জেলা প্রশাসক বরাবরে অবমুক্তির আদেশ প্রদান করেন। উক্ত রায় ডিক্রী আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আপিল ট্রাইবুনালে অর্পিত আপিল ২১১/২০১৭ দায়ের করেন মনিন্দ্র। জালিয়াত আব্দুল মতিন অর্পিত আপিল ২৪১/২০১৭ দায়ের করে ও জেলা প্রশাসক, সিলেট অর্পিত আপিল ২২৪/১৭ দায়ের করে। তিনটি মামলা একত্রে শুনানিয়ন্তে ২১১/১৭ আপিল মঞ্জুর হয়। অপরদিকে আমার পৈতৃক খরিদা ১৭৮২ খতিয়ানের ১১১৪৯ ও ১১১৫০ দুটি দাগ আমার বরাবরে অবমুক্তির আদেশ প্রদান করেন বিজ্ঞ আপিল ট্রাইবুনাল এবং জেলা প্রশাসকের দায়েরকৃত আপিল ২২৪/১৭ নং মোকদ্দমাটি আংশিক সংশোধন পরিবর্তন আকারে আপিল নামঞ্জুর করেন। এবং আপিলে ১৭৮২ খতিয়ানের ১১ টি দাগের ভুমি বিশে^শ^র জিউর দেবতার) মন্দিরের নামে অবমুক্তির আদেশ প্রদান করেন । এদিকে, জালিয়াত আব্দুল মতিনের দায়েরকৃত ২৪১/১৭ অর্পিত আপিল মোকদ্দমাটি দুতরফাসূত্রে শুনানিয়ন্তে জাল দলিলাদি প্রমানিত হয়ে আপিলটি নামঞ্জুর হয় ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বরে।

উল্লেখ্য যে, অর্পিত আইনে আপিল ট্রাইবুনালে রায়ের পরবর্তী আর কোনও আদালতে মামলা দায়ের করার সুযোগ না থাকলেও যা আইনে উল্লেখ রয়েছে ( ২২ এর উপধারা-৩) ওই চক্রের ইঙ্গিতে জালিয়াত আব্দুল মতিন মহামান্য হাইকোর্টে ১১৩/১৮ রিট মোকদ্দমা দায়ের করে ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ইং তারিখে আদালতকে ধোকা দিয়ে আইন পরিপন্থি এক আদেশ হাসিল করে। জেলা জজ আপিল ট্রাইবুনালের রায়কে অনৈতিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়। উক্ত ১১৩/১৮ রিট বিষয়ে আমি অবগত হয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশনে লিভ টু আপিল নং ১১৮০/২০১৮ দায়ের করি। মাননীয় হাইকোর্টের ১১৩/১৮ মোকদ্দমার বৈধতার চ্যালেঞ্জ করলে উভয়পক্ষে শুনানিয়ন্তে উক্ত মোকদ্দমার সমুহ কার্যক্রম স্থগিত করে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

ওই চক্রের আরেক ভুমিদস্যু রাতুলেন্দু দত্ত বিশে^শ^র জিউর দেবতার ১৭৮২ খতিয়ানের ১১১৪৭ দাগের কতেক ভুমি একসনা লীজ বন্দোবস্থ গ্রহণ করে পাকা দালান নির্মান করে। উক্ত ভুমি আত্মসাতের লক্ষ্যে তাঁর পৈতৃক খরিদামর্মে এক আন-রেজিস্টার্ড জাল দলিল তৈরি করে সিলেট ২য় জজ আদালতে স্বত্ব মোকদ্দমা ২৪২/২০১২ দায়ের করে। শুধু তাই নয়, ভুমিখেকো ঐ রাতুলেন্দু অর্পিত ট্রাইবুনালে ৩৫১/১২ নং মামলাও দায়ের করে জালিয়াত রাতুলেন্দু বরাবরে অবমুক্তির জন্য। রাতুলেন্দু একজন ভারতীয় নাগরিক এবং আসাম রাজ্যের শিলচরে তার অনেক ভুসম্পত্তিও রয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল রাখার হীন উদ্দেশ্যে নানা চল-ছাতুরির আশ্রয় নিতে থাকে। এদিকে, নারায়ন পুরকায়স্থ ফনি ও ননী পুরকায়স্থ দুই ভ্রাতা ১৭৮২ খতিয়ানের ১১১৪৮ দাগের কতেক ভুমি লিজ বন্দোবস্থ এনে তথায় বসবাস করে আসছে। এবং ঐ ভুমিটি আত্মসাতের লক্ষে ফনি পুরকায়স্থের ভ্রাতা ননী পুরকায়স্থের শ^শুরের নামে জাল একটি আন-রেজিষ্টার্ড দলিল তৈরি করে অর্পিত ট্রাইবুনালে মামলা নং ৩৫৮/২০১২ দায়ের করে-যা চলমান রয়েছে। এই চক্রের মূল নায়ক গিরিঙ্গীবাজ মামুন উদ্দিন চৌধুরী ১৭৮২ খতিয়ানের ১১১৬২ দাগের কতেক ভুমি একসনা লীজ বন্দোবস্থ নিয়েও তথায় বসবাস করে আসছে। শুধু তাই নয়, ওই মামুন উদ্দিন চৌধুরী যে দাগের ভুমিতে অবস্থান করেন, সেই দাগ গোপন রেখে ১৭৮২ খতিয়ানের ভিন্ন ৫ টি দাগ উল্লেখ বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে দাবি মনিন্দ্রের। এ অবস্থায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়সহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ন্যায় বিচার চেয়েছেন মনিন্দ্র।