যে কারণে করোনায় সুরক্ষিত আফ্রিকা

ডেস্ক রিপোর্ট:

সালটা ২০১৪। এক অজানা ভাইরাসের সংক্রমণে শুরু হয় মৃত্যুমিছিল। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের আকাশ ভারী হয় মৃত্যুর আর্তনাদে। পরে এই ভাইরাসের নামকরণ হয় ইবোলা, মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর ত্রাস। ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ঘোষণা করে পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব গিনির প্রত্যন্ত এলাকায় মহামারি ইবোলা। গত বছরও রোয়ান্ডা সীমান্তবর্তী গোমা শহরের ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল ইবোলা। তার উপর ম্যালেরিয়ার আতঙ্ক তো রয়েছেই। সংক্রামক ব্যাধিতে যেখানে বারে বারেই আক্রান্ত হয় আফ্রিকা, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সেভাবে ছুঁতেও পারেনি। কীভাবে নিজেদের সুরক্ষার কবচে মুড়ে রেখেছেন আফ্রিকাবাসী? কারণ জানালেন আফ্রিকাতে হু-র রিজিওনাল ডিরেক্টর মাতশিদিসো মোয়েতি।

পূর্ব আফ্রিকায় প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর জানা যায় দিনকয়েক আগে। ৫০ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তবে তিনি বিদেশি পর্যটক ছিলেন। দ্বিতীয় আক্রান্ত ইথিওপিয়ার এক জাপানি পর্যটক। তবে সিওভিডি-১৯ পজিটিভ হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল। জানা গিয়েছে, তিনি নাকি দেশেও ফিরে গিয়েছেন। নাইরোবিতে এক মহিলার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল। তিনি আমেরিকা থেকে লন্ডন হয়ে নাইরোবিতে ফিরেছিলেন। তবে পরে পরীক্ষা করে তার শরীরে কোনো ভাইরাসের খোঁজ মেলেনি। এর বাইরে পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার কোথাও ভাইরাস সংক্রমণের খবর সেভাবে পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইরাসকে যেখানে বিশ্ব জোড়া মহামারি অর্থাৎ ‘প্যানডেমিক’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেখানে আফ্রিকা বলতে গেলে সম্পূর্ণই করোনা-মুক্ত।

ইবোলার তাণ্ডব দেখেছে আফ্রিকা, মানুষ তাই অনেক সচেতন

১৯৭৬ সালে ইবোলা ভাইরাস প্রথম হানা দেয় আফ্রিকায়। ওই বছর মৃত্যু হয়েছিল ২৫১ জনের। আক্রান্ত প্রায় ৩১৮। ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত শুধু গিনিতেই ইবোলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ২৫ হাজার। কঙ্গো, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সুদান, গ্যাবন, উগান্ডা, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়া সহ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে ইবোলায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক।

হু-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর মাতশিদিসো বলেছেন, সংক্রামক ব্যধির বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন আফ্রিকার মানুষজন। বিশেষত গ্রামীণ এলাকাতেও সচেতনতার প্রসার অনেক বেশি। করোনার সংক্রমণ যখন মহামারির চেহারা নিচ্ছে, তখন থেকেই মধ্য, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছিল। দোকান, বাজার, সুপারমার্কেটে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার রাখা হয়েছিল, লোকজনেরাও নিজেদের সঙ্গে সবসময় স্যানিটাইজার, সাবান নিয়ে ঘুরতেন। সামান্য সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা গিলেও স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতেন। তাই স্থানীয়দের মধ্যে রোগের সংক্রমণ সেভাবে ছড়ায়নি।

হু জানিয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও গত দু’মাস ধরে মানুষজন কোনো বড় জমায়েত বা উৎসব-অনুষ্ঠানে শামিল হননি। যেকোনো রকম অসুস্থতা হলেই তারা নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলছিলেন। এড়িয়ে চলছিলেন একে অপরের সংস্পর্শ। তৎপর ছিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও। জ্বর বা সর্দির উপসর্গ দেখা দিলেই চটপট সেই রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। গ্রামে গ্রামে হেলথ ক্যাম্পও করা হয়।