সুনামগঞ্জে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

 

ডেস্ক রিপোর্ট:

নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে সুনামগঞ্জে ১১ টি উপজেলায় হাওরে বেরিবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি । শনিবার সকাল ১১ টায় শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারে সংবাদ সম্মেলন করে হাওরের বেড়িবাঁধের অগ্রগতি ও চলমান কাজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি তুলে ধরে সংগঠনের আগামী দিনের সাংগঠনিক ও আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রশাসনের অবহেলা আর দায়িত্বহীনতায় ২০১৭ সালের মতো হাওরে পানি ডুকে ফসল হানি হলে সংশ্লিষ্ট অফিস ঘেড়াও সহ কর্মকর্তাদের আসামি করে আদালতে মামলা করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় ,২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংগঠনের সকল উপজেলা কমিটি থেকে পাওয়া তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা হয়নি বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় শুরু থেকেই আশংঙ্কা করা হয়েছিল এবারও সঠিক সময়ে কাজ শেষ হবে না। তাই প্রমাণীত হলো। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে স্মারক লিপি দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি। হাওর বাঁচাওয়ের দাবি ছিল প্রকাশ্যে সমাবেশের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করার জন্য। কিন্ত এই দাবি মানা হয়নি। প্রশাসনের খেয়াল খুশি মতো ইউএনও কার্যালয়ে বসে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। তার ধরুন সঠিক সময়ে কাজ শুরু হয়নি, শেষও হলো না।

লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন উপজেলায় পিআইসি সভাপতি/সদস্য সচিবকে আটক করে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। কাজের শেষ সময়ে এসে এসব কেন? এখনতো প্রশাসনের উচিত আনুষ্ঠানিক ভাবে বাঁধের কাজ শেষ ঘোষণা করা। এগুলো সময় বাড়ানো এবং নিজেদের উপর থেকে দায় সড়ানোর পাঁয়তারা কি না? এমন প্রশ্ন তুলছেন তারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যথাযথ সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার ফলে হাওর ডুবি হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। পাউবোর অগ্রগতি প্রতিবেদনেও হাওরের কাজের সঙ্গে কোনো মিল নেই বলে জানানো হয়।

এসময় উল্লেখ করা হয়, পাউবো সুত্রে জানা যায়, বাঁধে মাটি ভরাট (স্তুপ ড্রেসিং সহ) কাজের ৫০-৫২ শতাংশ, দুরমুজ করা ৮-১০ শতাংশ, ঘাস লাগানো ৪-৫ শতাংশ অন্যান্য ৩৩ শতাংশ মোট ১০০ শতাংশ। কিন্তু আমরা গত ২৩ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত যে বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি তাতে কোথাও মাটির কাজ শেষ হয়েছে এমন বাঁধ আমরা দেখিনি। আমরা যে বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি তার মধ্যে দিরাই উপজেলার পিআইসি নং ৪, ৫, ৬, ৯, ১৩, ১৩ (ক), ১৪ (ক), ২৯ ও ৩৯ নং পিআইসির কাজের অবস্থা খুব নাজুক। এখানে বাঁধ তৈরীর কোন নীতিমালা মানা হয়নি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পিআইসি নং ০১, ৩, ৪, ৬, ৯, ১৪, ১৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৪১, ৪২, ৪৩ শাল্লা উপজেলার ১৪, ১৫, ২৩, ২৬, ৪৪, ৬৩, ৬৭, ৭১, ৭৪, ৭৬, ৮৯, ৯০, ১১১, ১১২, ১২৫, ১৩২, ১৩৭, ২৭, ৪১, ১১০, ১২৪, ১৩২ (ক), ৩৯, ৪০, ৪১, ৬৫,৭৪, ১০৭, ১২৩, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১, ১৩৩, ১৩৪, ১৩৮,১৩৯, ৮১,৮২ ও ৮৩। জগন্নাথপুর উপজেলার ০২, ১১, ১২ জামালগঞ্জ উপজেলার ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩২, ৩৫, ৩৭, ৫১, ৫৬, ৬১, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১,২,৩,৪,৫,৬, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পিআইসি নং ০১, ০২, ০৬, তাহিরপুর উপজেলার ৩৭,৩৮,৩৯,৫৯,৬০ উক্ত বাঁধগুলোতে কাজের মান খুবই খারাপ এমনকি বাঁ নির্মানের নীতিমালা মানা হয়নি কাজের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত কাজও শেষ হয়নি বলে উল্লেখ করেন তারা

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয় পানি উন্নয়ণ বোর্ড সুত্র জানায় ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সংগঠন বিভিন্ন উপজেলা কমিটির কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে হাওরে ৫০-৬০ ভাগ বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে কোথাও কোথাও ৩০ ভাগও হয়নি বলেও দাবি তাদের। হাওরে অনেক অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারাও চলছে বলে জানান তারা।

এবার হাওর রক্ষা বাঁধে দিরাই-শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারা। গত তিন দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পিআইসি সভাপতিদের গ্রেফতারের হিরিক পড়েছে। এটা প্রশাসন নিজদের দায়মুক্তি করার জন্য করছে বলে দাবি তাদের। কাজ শুরু থেকে পিআইসিকে চাপে রাখলে ২৮ ফেব্রæয়ারির আগেই কাজ শেষ হয়ে যেতো। হাওরের কোনো বিপর্যয় হলে এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। সুনামগঞ্জের কৃষকদের নিয়ে প্রয়োজনে পাউবো অফিস, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ঘেরাও কর্মসূচিসহ আদালতে মামলা করে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে ঘোষণা প্রদান করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি।

নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ সমাপ্ত না করার প্রতিবাদে আগামী ২মার্চ থেকে জেলা সদর থেকে জেলার সকল উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পথসভা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্ট রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সহ সভাপতি সুকেন্দু সেন, সিনিয়র সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসের পীর, ডা. মুরশেদ আলম, ইয়াবুব বখত বাহলুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী, একে কুদরত পাশা, সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার দাস, সহ সভাপতি চন্দন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক শহীদনূর আহমেদ, মানব চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর মতিলাল চন্দ, আনোয়ারুল হক ,দিরাই উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদব শামছুল ইসলাম সরদার প্রমুখ।