বাবার রাজনৈতিক দর্শন আমার শিক্ষা

 

কয়েস গাজী:

জন্মের পর আমি অসুস্থ ছিলাম চার মাস। চার মাস বয়সে আমার আম্মা আলম রওশন চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিলেট মেডিকেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আমি চার মাস বয়েসে মায়ের দুধ পান করতে পারিনি। আম্মা ছিলেন হাসপতালে। আমি ছিলাম কুয়ারপার আমার নানীর বাড়িতে। সেখান আমাকে লালনপালন করেন আমার খালারা। মায়ের চাচাতো বোনের দুধ পানে জীবন বাঁচিয়ে রাখেন মহান আল্লাহ। সেই থেকে আমার দুধমা তিনি। আজো আছেন।

আমার জন্য আব্বা দেওয়ান ফরিদ গাজী ঔষধ পর্যন্ত কিনতে পারেননি। ফার্মেসীতে গেলে ঔষধ বিক্রি না করে বলে আপনার কাছে ঔষধ বিক্রি করা যাবেনা। এই বলে ফার্মেসী বন্ধ করে দিত। বঙ্গবন্ধুর কাছে খবর গেলে তিনি ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের নুরুল ইসলামের মাধ্যমে ঔষধ পাঠান। আমার চার মাস বয়সে বাম হাতে একটা অপারেশন হয়েছিল। আব্বা তখন আয়ুব শাহীর সামরিক শাসনে আত্মগোপন করেন। নৌকায় করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাংগঠনিক কাজসহ নিজেকে নিরাপদে রেখে কাজকর্ম চালিয়ে যান। আমার জন্মের ১০দিন পর আমাকে দেখতে আসেন এটা আমার নানুর মুখে শুনেছি।

আব্বা আমাদের ভাইবোনকে ঠিকমত দেখাশুনা করতে পারেননি। কারণ আব্বা বেশির ভাগ সময়ই নেতা কর্মীদের সময় দিতেন। সাংগঠনিক কারণে সবসময় বাসা পরিবার সন্তানদের কথা ভাবতেন কম। আমার দাদাই ছিলেন তাহার মাথার ছায়া। সবসময় দেখতাম দাদীকে বলে যেতে। আর আমাদের আম্মাকে বলতে দেখেছি তুমি বাসা সামাল দিও । বাচ্চাদের খেয়াল করো। এতদুর্বিসহ জীবন নিয়েও আমাদের দাদীকে কোথায়ও যেতে দিতেননা। মাকে ছাড়া কিছুই বুঝতেননা-এজন্য দাদাকে হারিয়েছেন খুব অল্প বয়সে।

বড়চাচা সহিদ গাজী সংসারের হাল ধরেন। বাবার জীবনকে কষ্ট দায়ক করে তুলেন আমাদের কিছু আত্মীয়স্বজন। জমিদারের বিরোধিতা করার কারণে। বাড়ীতে যাননি নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত। আমার দেখামত তেমন একটা যাননি বাড়িতে। আমি যখন পঠাশালায় যাইনি, তখন ১৯৬৪/৬৬ সাল হবে। পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে বঙ্গবন্ধু সহ আরো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সেদিন আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল । ইন্দারার ওয়ালে আঘাত পেয়েছিলাম। লামাবাজার পাঠশালা একটি ঐতিহাসিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে লেখাপড়া করে অনেকে সমাজের ও সরকারের উচ্চ আসনে আসীন ছিলেন। বড়বড় ব্যবসায়ীও আছেন। ১৯৬৬ সালে বাবার দীর্ঘ কারাজীবন আমাদের খুব কস্টদায়ক ছিলো