কোনো দিন সংবাদ শিরোনাম হতে চাইনি

 

এমএ রহিম, অতিথি লেখক:

১৯৯১ সালের কথা। দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকায় শিক্ষানবীস সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেই। আমার এক সিনিয়র বলেছেন, এখন থেকে তোমার কাজ হবে অন্যের বিষয়ে যত্ন নিয়ে পত্রিকার পাতায় লিখবে। শিরোনাম করবে নানা বিষয়ে। আমারও একই ধারণা ছিল।

শুরু করলাম শিক্ষানবীস সাংবাদিকতা। কয়েক মাস যেতেই ‘বাই নেমে’ রিপোর্ট ছাপা শুরু হলো। সেকী আনন্দ। সার্বিক সহযোগিতা করতেন আজকের দৈনিক সিলেটের ডাকের বার্তা সম্পাদক সমর দা। কিন্তু এক বছর ৩ মাসের মাথায় আমি নিজেই শিরোনাম হয়ে গেলাম জাতীয় দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায়। দৈনিক সিলেট বাণী কর্তৃপক্ষ একদিন রাতে এসাইনমেন্ট দিয়ে পাঠালেন একটি ঘটনাস্থলে। রাত তখন ১০ টা হবে। ঘটনাস্থলে যেতেই ডাকাত ডাকাত বলে আমিসহ পুলিশকে ঘেরাও করে ফেললো। তার শুরু করলো আমার উপর হামলা। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এক সময় দুর্বৃত্তদের হামলা থামল। ততক্ষণে শরীরের কাপড় উধাও হয়ে গেছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাঁপছি। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে তাদের ভ্যানে তোলেন। এসময় আমার বয়সী এক তরুণ এগিয়ে আসেন। তার শরীরের সার্ট খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দেন। তখন পরিচয় জানতে চাইনি। ২-৩ দিন পর অফিসে দেখা তাঁর সঙ্গে। পরিচয় পেলাম তিনি লেখক জফির সেতু। যিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। লেখক জফির সেতুর প্রতি কোনো দিন কৃতজ্ঞতা জানাইনি। কারণ এতে তিনি ছোট হয়ে যাবেন। এখনো দেখা হলে জফির সেতু ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরেন অতি আন্তরিকতার সাথে।

২০০০ সালে সিলেটে কাজ করছি দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধি হয়ে। ওই সময় সীমান্ত অস্থিরতা দেখা দেয়। সংবাদ সংগ্রহে প্রায় প্রতিদিন ছুটে যেতে হতো তামাবিল, জাফলং, পাদুয়ায়। একদিন ফিরে আসার সময় তামাবিলে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ি। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আমাকে উদ্ধার করলেন। প্রায় সমস্ত শরীর ব্যান্ডেজ করে দিলেন। কারণ আমার শরীরের প্রায় ৬০ ভাগ চামড়া ছিলনা। সিলেট ফিরে আসতেই খবর পেয়ে যান অনেক সহকর্মী। পরদিন দৈনিক সিলেটের ডাকে আমাকে নিয়ে শিরোনাম।

২০০৭ সাল পর্যন্ত আর কোনো শিরোনাম হতে হয়নি। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে সকালে ঘুম থেকে উঠেই কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় চোখ বুলাই। প্রতিটি পত্রিকায় দেখতে পাই আমাকে নিয়ে শিরোনাম করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে। একটি জাতীয় ইংরেজি পত্রিকায়ও ওই রিপোর্ট ছাপা হয়। তাতক্ষণিক যোগাযোগ করি থানায়। অফিসার ইনচার্জ জানালেন ‘ আপনার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা হয়নি।’ পত্রিকাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে মামলার কপি দেওয়ার অনুরোধ করলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ মামলার কপি দিতে পারিনি, যে মামলার এজহারের উপর ভিত্তি করে তারা রিপোর্ট করেছিল।

 

 

২০১০ সালে আমি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করি। রায় আমার পক্ষে আসে। আবারও পত্রিকায় আমি শিরোনাম হলাম। মানবজমিনব কর্তৃপক্ষ আপীল করলেন। আবারও আমি রায় পেলাম। আবারও শিরোনাম।

এর আগে অবশ্য সাপ্তাহিক টেমস সুরমা ও সাপ্তাহিক বাংলার বারুদে আমাকে নিয়ে একাধিকবার শিরোনাম হয়েছে। আমার উপর নানা সময়ের নির্যাতন সংঘটিত ঘটনা নিয়ে ছিল ওইসব রিপোর্ট।

সর্বশেষ বাংলার বারুদের বর্ষ-৭ এর ১৮৭ সংখ্যায় আমাকে নিয়ে বিশাল আকারের রিপোর্ট শিরোনাম হয়। শিরোনাম হচ্ছে ‘১৪ বছর আগের ইতিহাস ভুলে গেছেন রহিম’। পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক বাবর হোসেন আমার সিনিয়র ভাই। অনেক বিপদের সময় পাশে পেয়েছি বাবর ভাইকে। তারই তদারকিতে বিস্তারিত লেখা হয়েছে।

বাবর ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। জানিয়ে দিয়েছি স্বইচ্ছায় গৃহবন্দী জীবন কাটাচ্ছি। কারণ যখনই ঘর থেকে বের হয়, তখনই মনে হয় অদৃশ্য কোনো শক্তি আমাকে ফলো করছে। তিনি কাছে টেনে চোখের পানি মুছে দিয়েছেন।