সুনামগঞ্জের রক্তি নদীতে চলছে নদী খননের কাজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের রক্তি নদীতে জুরেসুরে চলছে নদী খননের কাজ। বেজায় খুশী স্থানীয় সাধারণ জনগণ। নদীর চারদিকে বয়ে আছে অসংখ্য ছোটবড় গ্রাম।

নদী খননের মাটি দিয়ে নদীর উভয়পাড় সহ ভরাট হচ্ছে অসংখ্য শক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাশাপশি ঐ মাটি দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে গ্রামীণ অভ্যন্তরীন রাস্তাঘাট। অকাল বন্যার কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করা হচ্ছে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোকে। গ্রামের পর গ্রাম মাটি ভরাটের দৃশ্য দেখলে মনে হয় যেন গ্রামগুলোর সেই পুরনো চিরচেনা প্রকৃতির রুপ যেন বদলে শহরে রুপান্তরিত হতে চলেছে।

কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে গ্রামীণ জনপদের মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়,জেলার হাওর বেস্টিত তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর থেকে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রক্তি নদী পর্যন্ত কাজগুলো পায় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নবারণ এন্টারপ্রাইজ নামের এই সংগঠনটি ।

প্রতিষ্ঠানটি নবারুন গে¬ারি নামক ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নদীগর্ভে চালানো হচ্ছে নদী খননের কাজ। পাশপাাশি নদী খননের মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নদীর তীরবর্তী গ্রাম আনোয়ারপুর, লোহাচুড়া, পাথারি, তিওর জালাল, বালিজুরি ও বারুঙ্কা গ্রামের গভীরগর্ত ভরাটের কাজ। এমন পশ্চাদপদ জনপদ এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ যেন এই অঞ্চলের মানুষের দিবা স্বপ্নের মতো মনে হয়। শত বছরে এমন ভাবে ভরাট করা হতো কিনা সন্দেহ ছিল গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে। লক্ষ লক্ষ টাকার মাটি বিনা খরচেই তারা ফেলে দিচ্ছেন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্টান, মসজিদ, কবরস্থান, ভরাট করা হচ্ছে। এসব উন্নয়ন কাজ হাসিলে ধর্ণা দিতে হতো চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে। খনন কাজ হওয়ায় গ্রামের লোকজন হাতের নাগালে পেয়ে গেছেন সোনার মাটি।

বালিজুরি পাথারিসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক গভীর গর্ত ভরাট করে দিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যেখানে ছিল না কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নির্বিঘেœ স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারছেন। পাশের বাড়ীর নলকুপ থেকে সহজেই সরবরাহ করতে পারছেন খাবার পানি। পরিত্যাক্ত ডোবা নালায় আর্বজনা জমে যে দুর্গন্ধ ছড়াতো এসব ভরাট হওয়ায় এখন আর তা নেই। পরিবেশ হয়ে উঠেছে বসবাস উপযোগী। বাড়ির পাশে পরিত্যাক্ত জায়গা ভরাট হওয়ায় সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন গ্রামের লোকজন। এবং এসবে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন দোকানপাট ও বাড়িঘর। ভাঙ্গনের মুখ থেকে রক্ষা পাওয়ায় সস্থির নি:শ^াস ফেলছেন ভাঙ্গন কবলিত লোকজন। বারুঙ্কার উত্তর দিকে রয়েছে ফসলি জমি রক্ষার একটি বাঁধ। এখানে মাটি ফেলায় শনির হাওরের বোরো ফসলি জমি রক্ষা পাবে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

এসব মাটি দিয়ে এলাকায় গভীর স্থান ভরাট করার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইনচার্জ আহমেদ ফয়েজ মুন্না কোন টাকা নিচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামের লোকজন জানান, মুন্না নামে কোন ব্যক্তি মাটি বিক্রি করে টাকা নিচ্ছেন না। তবে বহু কষ্টে গ্রামের রাস্তাঘাটসহ গভীর জায়গায় মাটি ভরাট করায় এলাকার লোকজন খুশি মনে শ্রমিকদের কিছু বখশিস দিচ্ছেন। বালিজুরি গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, শত বছরেও এমনভাবে মাটি ভরাট করা সম্ভব হত না। রক্তি নদীর মাটি আমাদের হাজারো পরিবারের জীবন যাত্রার মান পাল্টে দিচ্ছে। বিনিময়ে কোন টাকা নিচ্ছেন না প্রতিষ্ঠানটি। আমরা নিজেরাই শ্রমিকদের খুশী মনে বখশিস দিচ্ছি। আনোয়ারপুরের ইউপি সদস্য বুলবুল ও পাথারি গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য একরামুল জানান, মাটি ভরাট হওয়ায় বদলে গেছে গ্রামের চেহারা। যে ভাবে গ্রামের উন্নয়ন হয়েছে শত বছরেও এরকম উন্নয়ন আশা করতে পারিনি। আগামীতে টিআর, কাবিটার মাটি ফেলার জায়গা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। বালিজুরি নোয়াহাটির সাখাওয়াত, বালিজুরি জাহাঙ্গীর মোড়ল, মুরসালিন, বারুঙ্কার শাহজাহান সাজিদ, লোহাছড়ার জাহাঙ্গীর জানান, আগে বর্ষাকালে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাতায়াতে সীমাহিন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। পাহাড়ী ঢলের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার ভয় তাড়া করতো বুকে। নদী খননের মাটি ভরাট হওয়ায় দুর্ভোগ আর বাড়ি ছাড়ার ভয় থেকে মুক্ত পেলাম। এখন গ্রামে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন দোকান পাঠ ও বাড়িঘর। নতুন করে স্বপ্ন জাগছে এলাকার মানুষের মাঝে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইনচার্জ আহমেদ ফয়েজ মুন্না জানান, আমরা নীতিমালা মেনেই নদী খননের কাজ করছি। নদী খননের মাটি দিয়ে নদীর উভয় তীর সহ এলাকা বন্যামুক্ত করতে সবার পরামর্শক্রমে গভীর জায়গা ভরাট করে দিচ্ছি। এতে এলাকার মানুষের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তবে তিনি মাটির বিনিময়ে টাকা নেন কিনা জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমার টাকা নেয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। আমার প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকি করছেন সংশ্লিষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা। বালিজুরি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুজ জহুর তালুকদার বলেন, রক্তি নদীর মাটি দিয়ে আমার ইউনিয়নের উন্নয়ন হচ্ছে। তবে মাটি বিক্রি করে কেউ টাকা নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত টাকা দিয়ে মাটি বিক্রির সংবাদ পাইনি। কিংবা কেউ এব্যাপারে অভিযোগও করেনি। যতটুকু জানি বিনা খরচেই মাটি দিয়ে ভরাট হচ্ছে রাস্তাঘাট, মসজিদ, কবরস্থানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।