বন্ধু ইকবাল মনসুর ভাল থেক

এমএ রহিম
২০০৩ সালের কথা। আমি সড়ক পথে ঢাকায় যাচ্ছি অফিসিয়াল কাজে। ভৈরব অতিক্রম করার সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠে। রাত তখন ১২ টা হবে। এতো রাতে কে ফোন দিলেন না ভেবেই রিসিভ করলাম।

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বললেন তিনি সেজন বলছেন। প্রথমে আমি চিনতে পারিনি। তার পর তিনি ব্যাখ্যা দিলেন পরিচয়ের। বললেন তালতলার সোনারগাঁও টেলিকমের আবদুল কাদির সেজন বলছেন। তারপর আমি চিনতে ভুল করিনি। এত রাতে ফোন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, বন্দরবাজার মশরফিয়া হোটেলের সামনে অবস্থান করছেন। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী। নিমন্ত্রণ খেয়ে বাসায় ফেরছেন। সাথে কিছু নগদ টাকা আছে। সেই সঙ্গে তার স্ত্রীর গায়ে আছে কয়েক ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার। কিন্তু দুটি মোটর সাইকেলযোগে ৬ যুবক তাদের পিছু নিয়েছে। যাদেরকে তিনি ছিনতাইকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই অবস্থায় তিনি এগোনোর সাহস পাচ্ছেন না। রাস্তাঘাট একেবারে নির্জন। তিনি সহযোগিতা চাইলেন। আমি একটু সময় চেয়ে নিলাম।
আমি এত দূরে অবস্থান করে কীভাবে সাহায্য করব তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। সহকর্মী সাংবাদিক ইকবাল মনসুরের কথা মনে হলো। ফোন দিলাম তাকে। ফোন রিসিভ করতেই জানতে চাইলাম তার অবস্থান। বন্দরবাজারে অবস্থান করছে জানতে পেরে সেজান ভাইয়ের বিষয়টি জানালাম। বন্ধু ইকবাল মনসুর জানিয়ে দিলেন কোনো সমস্যা নেই। এই বলেই বন্ধু ইকবাল মনসুর মশরফিয়া হোটেলের সামনে গিয়ে ফোন দেন। জানতে চান সেজন ভাইয়ের অবস্থানের কথা। রাস্তার উল্টোপাশে দাড়িয়ে আছেন সেজন ভাই-এমন তথ্য জানালাম। তারপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ১০-১৫ মিনিট পর ইকবাল মনসুর আমাকে ফোন দিলেন। জানালেন, সেজন ভাইয়ের বাসায় চা পান করছেন। পরে সেজন ভাই আমাকে বলেছিলেন, ইকবাল মনসুর তার পাবলিকা টয়োটা গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন। এও বলেছেন ইকবাল মনসুর না হলে ওই দিন তিনি বিপদে পড়তেন।

২০০০ সাল থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠা ইকবাল মনসুরের সাথে রয়েছে এ ধরনের অসংখ্য স্মৃতি। বয়সে জুনিয়র ইকবাল মনসুর এভাবে অসময়ে চলে যাবে তা ভাবতে কষ্ট হয়। কিন্তু সত্য মেনে নিতে হয়।