প্রতারক মুনসীফ আলীর বিরুদ্ধে প্রতিকার দাবি

 

ডেস্ক রিপোর্ট:

সিলেট নগরীর রশাহজালাল উপশহরের মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির ফ্ল্যাট মালিকরা ১৬ বছরেও রেজিস্ট্রেশন পাননি। এই কোম্পানির মালিক মুনসীফ আলীকে একজন প্রতারক আখ্যা দিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের কাছে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির ফ্ল্যাট মালিকদের অধিকাংশই প্রবাসী। কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ফ্ল্যাট কিনলেও আজো আমরা রেজিস্ট্রেশন পাইনি। বর্তমানে কোম্পানির হিজল টাওয়ারে ৮৪ জন ফ্ল্যাট মালিক আছি। ৩৭ লাখ থেকে ৭৮ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছি আমরা। তখন কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসীফ আলী দ্রুত রেজিস্ট্রেশনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা টালবাহানায় ১৬ বছর ধরে তা ঝুলিয়ে রেখেছেন। এরমধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি ৩ গুণ বেড়েছে। আমরা তাগিদ দিলেও তিনি শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। তাকে উকিল নোটিশ দিলেও তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা নিতান্তই হাস্যকর। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা আন্দোলন শুরু করি। এক পর্যায়ে মুনসিফ আলী ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ আমাদের সাথে এক সভায় বসেছিলেন। সভায় রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন ও ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যেই সব ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাও ভঙ্গ করেছেন মুনসীফ।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, তিনি ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা থেকে একটি চিঠিতে হাউজিং ফি, সার্ভিস চার্জ ও সেলস পারমিশনের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দেন। আমরা চিঠি পেয়ে অবাক হয়েছি। কারণ, সেলস পারমিশন ফি কোম্পানির জেনেই চুক্তি করি। আমরা প্রতিবাদ জানাই ও অপারগতা প্রকাশ করি।

২০১৯ সালের ২৩ জুলাই তিনি আরেকটি চিঠিতে জানান, জাতীয় গৃহায়ন কর্র্তৃপক্ষের অফিসে ঢাকা থেকে সিলেটে আসা-যাওয়া, রেজিস্ট্রারি অফিসে যাতায়াত ও বিভিন্ন কাগজ সত্যায়ণ বাবদ আরো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। হাস্যকর এ প্রস্তাবেরও প্রতিবাদ জানাই। তার কুটকৌশলের কারণে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর তাকে উকিল নোটিশ পাঠাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১১ জানুয়ারি আবারো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি পাঠান মুনসীফ। সেই সাথে সার্ভিস চার্জ ১২০০ টাকার বদলে মার্চ মাস থেকে ২৫০০ টাকা করে পরিশোধের জন্য চিঠি দেন। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি গালিগালাজ করে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।

তারা বলেন, মুনসীফ কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন বলে তারা শুনেছেন। ফ্ল্যাট বিক্রির সময় ব্যাংক ঋণ নেই বললেও সম্প্রতি সাউথইষ্ট ব্যাংক সম্পূর্ণ প্রজেক্ট তাদের নিকট বন্ধক বলে সাইনবোর্ড টানিয়েছে। আমাদের প্রতিবাদের মুখে এক চিঠিতে তিনি রেজিস্ট্রেশনের আগে তা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন। আমারা শতভাগ টাকা দিয়ে মালিকানা বুঝে নিলেও আজো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ হয়নি। তারা বলেন, সরকার প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের অনুরোধ করেন। কিন্তু এমন প্রতারণা হলে কোন ভরসায় প্রবাসীরা বিনিয়োগ করবেন? তারা সরকারকে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টিতে মুনসীফ আলীর মত প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।

প্রশাসনসহ সংশ্লিস্ট মহলের নিকট তাদের ৪ দফা দাবি হচ্ছে, দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে দিতে হবে এবং বিলম্বের কারণে ফির বর্ধিত টাকা মুনসীফ আলীকেই পরিশোধ করতে হবে, সেলস পারমিশন ফি চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিকেই বহণ করতে হবে, সার্ভিস চার্জের নামে বাড়ানো ফি কমিয়ে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। হুমকি ধমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য মুনসীফ আলীকে ক্ষমা চাইতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান কুনু, বদরুজ্জামান সেলিম, আব্দুল কাদির, আশরাফ হোসেন পাটোয়ারী, দিদারুল আলম, মাহবুবুল আলম, ডা. শাখাওয়াত প্রমুখ।