কানাইঘাট নিয়ে যা ভাবেন ওসি শামসুদ্দোহা

 

বিশেষ প্রতিনিধি:

কানাইঘাটের মানুষ পুলিশি সেবা সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি সচেতন নয়। তারা প্রতিনিয়তই দালালের কাছে প্রতারিত হচ্ছেন। দালালদের আস্তানা ভেঙ্গে দিয়েছি। এখন দালাল গোষ্ঠি থানা চত্বরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে তারা থানার বাইরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে নিরিহ মানুষের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। এই অবস্থাও বেশিদিন চলতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। সাধারণ মানুষ যাতে আইনের ও পুলিশের সেবা পুরোপুরি ভোগ করতে পারেন সেজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কানাইঘাট থানায় যোগদানের পর থেকে এই কাজটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম ওইভাবে কানাইঘাট নিয়ে তার অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।

অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা বলেন, ২০২০ সালের প্রথম দিন থেকে কুইক রেসপন্স ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কানাইঘাটবাসীকে পুলিশি সেবা দেয়া হবে। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে পুলিশিং সেবা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা পরে প্রবাসী ও ভুক্তভোগীরা যাতে নিবিড়ভাবে আইনিসেবা পায় সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কেউ যদি অর্থের বিনিময়ে একটি জিডিও করার অভিযোগ করে তাহলে সেক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসি দোহা বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক কয়েকটি বিষয় বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা মনিটরিং করছেন ডিআইজি ও এসপি। মাঠ পর্যায়ে আমরা তা কার্যকর করছি। ওই বিষয়গুলো হলো নিরিহ মানুষ কোনোভাবেই হয়রানীর শিকার যাতে না হন সেদিকে কঠোর নজরদারি করা। মানুষের সাথে ভালো আচরণ করা এবং টাকার বিনিময়ে কোনো ধরনের কাজ না করা। ওইসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কানাইঘাটের প্রতিটি পুলিশ আন্তরিক। এছাড়া বিট পুলিশিংকে আরো সম্প্রসারিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পুলিশি সেবা আরো গতি লাভ করেছে।

শাসুদ্দোহা বলেন, অপরাধীদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো অপরাধী এই থানা এলাকায় অপরাধ করে রক্ষা পাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি ডাকাতির ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এক বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল। বাড়ির মালিক ওই ঘটনায় মামলা করতে চায়নি। পুলিশ নিজে উদ্যোগী হয়ে ঘটনা তদন্ত করেন। শেষ পর্যন্ত ডাকাতি ঘটনার তথ্য উদঘাটি হয়। পরে ওই ঘটনায় মামলা হয়। গ্রেফতার হয় আসামি। মাদক সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স। মাদকের নাম গন্ধ নেই বললে চলে।

ইন্ডিয়ান গরু সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওসি দোহা বলেন, কানাইঘাট থানা এলাকা সীমান্ত এলাকা। যেকোনো সীমান্ত দিয়ে গরু নিয়ে আসা হয়। এই গরু সীমান্ত পারি দিয়ে কীভাবে আসে তা বোধগম্য নয়। কারণ সীমান্তে রয়েছে সীমান্ত রক্ষী। তাদের কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চোরাচালান রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখ ফাকি দিয়ে চোরাই গরু নিয়ে আসা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইন্ডিয়ান গরু আটক করে। তার দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মধ্যে ওই ধরণের বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করেছে পুলিশ। বিষয়টি পুলিশের না হলেও তার দায়দায়িত্ব পুলিশের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বহুল আলোচিত লোভাছড়া পাথর কোয়ারি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পাথর প্রাকৃকিত সম্পদ। বিভিন্নভাবে ওই সম্পদে কানাইঘাট সমৃদ্ধ। এখানে কাজ করে প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক। তারা সনাতন পদ্ধতিতে পাথর আহরণ করেন। তবে কেউ কেউ লিজ নিয়ে পাথর উত্তোলন করেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় সরকারি নীতিমালা মানা হয় না। এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়ে সহযোগিতা চাইলে পুলিশ তা করবে। কিন্তু অন্যের দায়িত্ব পুলিশের উপর চাপিয়ে দিয়ে নয়। তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে লোভাছড়া পাথর কোয়ারিকে সাজিয়ে তুললে এখান থেকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।

কানাইঘাটবাসীর পক্ষ নিয়ে ওসি শামসুদ্দোহা বলেন, কানাইঘাটে কোনো ট্রাক টার্মিনাল ও বাস স্ট্যান্ড নেই। বাস ও ট্রাকের জন্য যৌথভাবে টার্মিনাল করলে কানাইঘাট উপজেলা সদর অনেক আধুনিক দেখাবে। এখানে কোনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় এই স্টেশন করা প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি বাইপাস সড়ক। যা কানাইঘাটবাসীর দির্ঘদিনের দাবি। এই উপজেলায় অনেক হাওর ও বিল রয়েছে। এসব হাওর ও বিল পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে সরকার অনেক রাজস্ব আয় করতে পারবে।

দোহা বলেন সরকার বিরোধী জামায়াত এই উপজেলায় অনেক শক্তিশালী। কিন্তু তারা ঘাপটি মেরে আছে। পুলিশও তাদের উপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। কোনো ধরণের দুর্ঘটনা ঘটাতে চাইলে পুলিশ তা কঠোর হাতে দমন করবে।