‘কোম্পানীগঞ্জে শামীম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী টিলাভূমি দখল ও চাঁদাবাজি করছে’

 

ডেস্ক রিপোর্ট:

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা টিলাভূমি জবরদখল ও চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার পশ্চিম বর্ণি গ্রামের মরহুম মাহমদ আলীর পুত্র আজির উদ্দিন। চেয়ারম্যান শামীম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ‘অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে’ চান তিনি। মঙ্গলবার সিলেট জেলা প্রসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন আজির উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও শারপিন টিলাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে লুটপাট, খুন-রাহাজানী, জবরদখল ও চাঁদাবাজির মহোৎসব। এ পাথর কোয়ারীর দখল ও চাঁদাবাজি নিয়ে গত কয়েক বছরে অর্ধশত অধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। মামলা ও হামলা হয়েছে শত শত। কিন্তু আজ অবধি কোনভাবে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও প্রাণহানী বন্ধ হয়নি। স্বজনহারা, সর্বহারা ও স্বত্বহারা মানুষজন পায়নি ন্যায়বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে আজির উদ্দিন উল্লেখ করেন, ‘শারপিন টিলার অন্তর্গত মটিয়া টিলায় রয়েছে আজির উদ্দিনের স্বত্বদখলীয় ১ দশমিক ৪৩ একর পাথুরে ভূমি। যা উপজেলার চিকাডহর মৌজার এস এ খতিয়ান-৩১, বিএস ছাপা খতিয়ান ২০, এসএ-১/১২৫ ও বিএস-১৮০ এতে দশমিক ০৮ একর এবং দাগ নং ১/১২৫, বিএস-১৭৮ এতে মোট ১ দশমিক ৩৫ একর আমন রকম ভূমি। ওই ভূমির মালিক ভোগদখল করে আসছেন। সম্প্রতি মটিয়া টিলাস্থ আমাদের স্বত্বদখলীয় ওই ভূমির উপর শ্যেনদৃষ্টি পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম ও তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর। তারা এই ভূমি আত্মসাত করতে চাইলে আদালত দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করা হয়। সিলেটের সহকারী জজ (কোম্পানীগঞ্জ) আদালত ৬৫/২০১৬ নং স্বত্ব মোকদ্দমায় তাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তারা আমাদের স্বত্ব ও দখল কেড়ে নিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এতে করেও সন্ত্রাসী শামীম বাহিনী বসে থাকেনি। তারা এ স্বত্বদখলীয় ভূমির উপর মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে বসে। চাঁদা না দিলে তারা আমাদের এ ভূমি খোদাই করে জোরপূর্বর পাথর তুলে নেবে এবং আমাদের খুন ও গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দিতে থাকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর মটিয়াটিলায় সশস্ত্র হানা দেয় শামীম বাহিনী। তারা হচ্ছে, উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমের বড়ভাই বিলাল হোসেন, ভাতিজা কেফায়েত উল্লাহ, নারাইনপুর গ্রামের আঞ্জব আলী আঞ্জু, আঞ্জব আলী আঞ্জু’র পুত্র রাজু ও শাহরিয়ার এবং দক্ষিণ সুরমার গোপশহরের এমদাদুল হকসহ শামীম বাহিনীর আরো প্রায় ১৫/২০ জন। তারা আমার কাছে ৫ লাখ চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় তারা আমাদেরকে এই ভূমি ভোগদখল করতে দেবে না, স্বজনপরিজনদের হত্যা ও গুম করে ভূমি জবরদখল ও পাথর লুট করে নেবে বলে হুমকি দেয়। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তারা অস্ত্রের মুখে আমাদের মটিয়াটিলার ভূমি হতে পাথর লুটপাট শুরু করে। ওইদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অস্ত্রের মুখে শামীম ও তার লোকজন আমাদের স্বত্বদখলীয় মটিয়াটিলার ভূমি থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার পাথর লুট করে নেয় এবং ভূমি খোদাই করে আরো প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে শামীম ও তার বাহিনী আজির উদ্দিনকে হত্যা ও গুম করায় ভয় দেখায়। এতে গত ১২ ডিসেম্বর সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবরে শামীম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটপাট, প্রাণনাশের হুমকি ও ক্ষতিসাধনের লিখিত অভিযোগ করা হয়। এর আগে কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলেও শামীমের প্রভাবেই অভিযোগ আমলে নেয়নি থানা পুলিশ। গত ১৫ ডিসেম্বর থানায় এই ব্যপারে এজাহার দায়ের করা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আজির উদ্দিন জানান, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের অন্তর্ভূক্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাস্থ তার গ্রাম পাড়–য়া ভোটকেন্দ্রে জামায়াত মনোনীত দাড়িপাল্লার প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান-এর পক্ষে কাজ করে শামীমের পরিবার। ফলে ওই আসনে একমাত্র ওই ভোট কেন্দ্রে জামায়াত বিজয়ী হয়েছিল। জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাথে তার পিতাসহ পরিবারের গভীর সখ্যতা রয়েছে। ১৯৯৬ সালে শামীমের পরিবার রাজনীতির খোলস পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মরহুম স্পিকার হুমায়ন রশীদ চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে কাজ করে এবং এর পর থেকে শামীম ও তার পরিবার আওয়ামী লীগ বলে নিজেদের পরিচয় দিতে শুরু করে। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর তৎকালীন ইজাদার ছাতকের সুনু মিয়া চৌধুরীর লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে শামীম পরিবারের লোকজন। দেশ স্বাধীনের পূর্বে তার পিতা আব্দুল বাছির খুন করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমায় আব্দুল বাছির জেল থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে বের হয়েই আবার নানা অপরাধ-অপকর্ম শুরু করেন।

আজির উদ্দেন জানান, শামীমের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জের যুবলীগ নেতা আব্দুল আলী হত্যাসহ চাঁদাবাজি, নাশকতা এবং সরকারী কাজে বাধাদানের অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলা চলমান রয়েছে। ২০০৮ সালের ২৮ নভেম্বর র‌্যাবের হাতে আটক হন শামীম। ২০০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যৌথবাহিনী তার বাড়ির ঘেরাও করে তাকে আটকের চেষ্টা করলে তিনি পালিয়ে যান। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল ছাতকের কাস্টমস ইন্সপেক্টর আব্দুল হালিম, সিপাহী সাইফুল ইসলাম ও হবিল মিয়া শামীমের হাতে গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ছাতক এলসি স্টেশনের সুপারিনটেন্ডেন্ট লোকমান হাকিম ও তাহির এন্ড সন্স’র কর্মচারী হবিল মিয়া কোম্পানীগঞ্জ থানায় পৃথক পৃথক এজাহার দাখিল করেন।

শামীম বাহিনীর কবল থেকে জানমাল ও সহায় সম্পদ রক্ষায় আজির উদ্দিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।